‘ভুয়ো’ প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের হদিস পেতে এ বার অভিযানে নামছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই জেলা জুড়ে এ ধরনের বহু সেন্টার চলছে। স্বাস্থ্য দফতরও এত দিন উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি। সেন্টারগুলির সঙ্গে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ এবং এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ফলে, রমরমিয়েই চলেছে অবৈধ স্বাস্থ্য-ব্যবসা। সমস্যায় পড়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। মাঝেমধ্যেই ধরা পড়েছে, রিপোর্ট ঠিক নেই। একটি সেন্টারের সঙ্গে অন্য সেন্টারের রিপোর্টও মেলে না।
এই সমস্যার বৃত্ত ভাঙতেই এ বার ‘ভুয়ো’ প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের হদিস পেতে অভিযানে নামছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “অভিযোগ এলেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। অবৈধ ভাবে, লাইসেন্স ছাড়া প্যাথলজিক্যাল সেন্টার খুলে বসলে উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হবে।”
ইতিমধ্যেই ‘পদক্ষেপ’ শুরুও হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগর এলাকায় একটি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার ‘অবৈধ’ ভাবে চলছিল বলে অভিযোগ এসেছিল। দেখা যায়, ওই সেন্টার চালানোর জন্য লাইসেন্সই নেই। রয়েছে বলতে ফিজিওথেরাপি সেন্টার চালানোর লাইসেন্স। অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সেন্টারে নোটিস পাঠানো হয়। প্যাথলজিক্যাল সেন্টার বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই প্যাথলজিক্যাল সেন্টারটি অবৈধ ভাবে চলছিল। অভিযোগ পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই এমন বহু ‘অবৈধ’ প্যাথলজিক্যাল সেন্টার চলছে বলেই অভিযোগ রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমটায় ‘বৈধ’, ‘অবৈধ’ চেনারও উপায় থাকে না। ঠেকে শিখতে হয়। ভুল রিপোর্টের জেরে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে রোগ কমার বদলে বেড়ে গিয়ে প্রাণহানির উদাহরণও রয়েছে। অথচ কিছু ডাক্তার (এমনকী সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকও) এ ধরনের সেন্টারে যেতেই রোগীদের উৎসাহিত করেন। পরে বুঝতে পারা যায়, ওই সেন্টারগুলির সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে কিছু চিকিৎসকের।
এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতার মদত থাকায় সেন্টারগুলিতে বিহিত চাইতেও যাওয়া যায় না। গেলেই হুমকি-হামলার মুখে পড়ার ভয় থাকে। স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারির অভাবেই এ জাতীয় প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলির রমরমা বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
নিয়মিত নজরদারির অভাব মেনেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এমনিতেই দফতরে কর্মীর অভাব। এই পরিস্থিতিতে নিয়মিত নজরদারি চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে, এ বার কড়া পদক্ষেপই করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।” কিছু দিন হল ‘অবৈধ’ নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। লাইলেন্স রিনিউ না-করার জন্য বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ‘অবৈধ’ প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলির বিরুদ্ধেও একই ভাবে পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ‘পশ্চিম মেদিনীপুর এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’।
সংগঠনের সম্পাদক নিতাই বারিক বলেন, “আমরাও চাই বৈধ ভাবে সেন্টার চলুক। অবৈধ সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করলে সব রকম সহযোগিতা করব।” জেলার কোথায় কোথায় লাইসেন্স ছাড়াই প্যাথলজিক্যাল সেন্টার চালানোর অভিযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিতেও শুরু করেছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। |