শারীরিক পরীক্ষার সময়ে সম্মান রক্ষার সামান্য আব্রুটুকুও পান না বহরমপুর মাতৃসদনের মহিলা রোগীরা। সম্প্রতি বহরমপুরের তিনটি সরকারি চিকিৎসালয়, নিউ জেনারেল, মাতৃসদন এবং সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে ফিরে স্বাস্থ্য দফতরের কয়েকজন প্রতিনিধি স্বাস্থ্যভবনে জমা দেওয়া রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনটি হাসপাতালেরই বহির্বিভাগে বহু রোগীর ভিড়ের মধ্যেই মহিলা রোগীদের পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। ফলে একান্তে চিকিৎসককে নিজের সমস্যার কথা বলা তো দূরের কথা, সারাক্ষণই
লজ্জায় সিঁটিয়ে থাকেন ওই মহিলারা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাতৃসদনে রোগিণীরা জন্মনিরোধক ‘কপার-টি’ পরার সময়েও প্রয়োজনীয় আড়ালটুকু পান না! একটিই ঘরে বেশ কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের সামনেই এক এক করে এক এক জনকে ‘কপার টি’ পরানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর এ বিষয়ে বক্তব্য, “আমি তদন্ত করে পরিস্থিতি দেখতে বলেছি। তার আগে মন্তব্য করা যাবে না।” আবার স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “সব হাসপাতালে মহিলা রোগীদের আব্রু বা আড়াল রক্ষার ব্যবস্থা যথাযথ নেই, সেটা স্বীকার করছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।”
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, শল্য চিকিৎসা, মেডিসিন বা স্ত্রীরোগ বিভাগে আসা রোগিণীদের জন্য সবুজ পর্দা টানা ‘স্ক্রিন’-এর আড়াল অধিকাংশ সময়েই পাওয়া যায় না। চিকিৎসকের সঙ্গে অধিকাংশ সময়ে থাকেন না কোনও মহিলা সহযোগীও। ফলে রোগিণীকে শুইয়ে বুক, পেট বা যৌনাঙ্গের রোগ পরীক্ষা করতে পারেন না চিকিৎসকেরা। |
নামেই পর্দা। বহরমপুর মাতৃসদনে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি। |
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, মাতৃসদনে প্রসূতি বিভাগের বহির্বিভাগে দরজা দিয়ে ঢুকেই টেবিলের সামনে বসে চিকিৎসক। সামনে রোগিণীদের দীর্ঘ লাইন। ডাক্তারবাবুর টেবিলের একধারে যে সবুজ পর্দা টানা আধখানা একটা ‘পার্টিশন’ রয়েছে বটে, তবে তাতে কোনও কিছুই আড়াল হয় না। রোগিনীদের যে শয্যায় শুইয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটা পর্দার পাশ গিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেই ঘরের মধ্যেই ভিড় করে দাঁড়িয়ে অন্য মহিলারাও। তাঁদের সামনেই শরীরের পরীক্ষা করাতে গিয়ে লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন গ্রামের বধূ। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “আমাদের যা রোগীর চাপ তাতে এক-এক জনকে আলাদা করে করে দেখাটা অসম্ভব। সমস্যার সমাধান হত যদি প্রয়োজনীয় পর্দা বা স্ক্রিন পাওয়া যেত। কিন্তু আউটডোর শুরুর সময় বেশির ভাগ দিন তা মেলে না। যদি বা মেলে দেখা যায় সেই স্ক্রিন শতচ্ছিন্ন।”
প্রসূতি বিভাগের অন্য পাশে দশ-বারো জন মহিলাকে জড়ো করে রেখেছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা।
কেন? জানা গেল, বেলা দেড়টার পরে এঁদের সকলকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে ‘কপার টি’ পরানো হবে। এটা কোনও নির্দিষ্ট ঘর নয়। যে দিন যে ঘর খালি থাকে সে দিন সেই ঘরেই মহিলাদের এক সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তেঁতুলিয়া থেকে আসা বছর চব্বিশের মলিনা বিবি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “আমাদের কি শরম নেই? অন্য মেয়ে-বৌদের সামনে লজ্জার মাথা খেয়ে কপার-টি পরাবে? কেন আলাদা-আলাদা করে এক-একজনকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে না? আমরা জন্তু-জানোয়ার নাকি?” পাল্টা ঝাঁঝিয়ে চতুর্থ শ্রেণির মহিলা কর্মী বলেন, “এইরকম ভাবেই হয়। না পোষালে চলে যাও।” |