উত্তরবঙ্গের ৭০টি ক্লাবকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উৎসব কমিটি প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া, ১৫ জনকে বঙ্গ সম্মান, আদিবাসী খেলোয়াড়দের ট্র্যাকস্যুট, নানাবিধ খেলার আয়োজন করতে গিয়ে আরও ১৯ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। মঙ্গলবার উৎসব কমিটির পক্ষে প্রাথমিক এই হিসাব দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এর বাইরে আদিবাসী খেলোয়াড়দের ট্র্যাক স্যুট কিনে দেওয়া, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মেলা, উত্তরবঙ্গ জুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিল্পীদের যাতায়াত, রাত্রিবাসে খরচও রয়েছে। উৎসব কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে খরচের হিসাব কয়েক কোটি ছাড়াবে। হিসাব সম্পূর্ণ হলেও অডিট করে তা রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ৫৪ লক্ষ টাকার হিসাব তৈরি হয়েছে। বাকি হিসাবের অডিট চলছে। সমস্ত হিসাবই রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হবে।” উৎসবের জন্য এত টাকা খরচ নিয়ে অবশ্য উত্তরবঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শিল্পী, রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশ যখন মনে করছেন, এই ধরনের উৎসবের আয়োজন করে রাজ্য সরকার সঠিক পদক্ষেপ করেছে। তখন অন্য একটি অংশ মনে করছে, রাজ্য সরকারের এমন আর্থিক সঙ্কটের সময়ে এই ধরনের উৎসব অর্থহীন এবং ভুল বার্তা দিয়েছে। তৃণমূল নেতা তথা উৎসব কমিটির অন্যতম কর্তা অরবিন্দ ঘোষ বলেন, “কেবল সেতু, রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করাই একটি সরকারের কাজ হতে পারে না। মানুষকে সঠিক সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ করে দেওয়াটাও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেদিক থেকে এই উৎসব সঠিক পদক্ষেপ।” পক্ষান্তরে, কর্মীদের যেখানে প্রতি মাসে বেতন দেওয়া যাচ্ছে না, তখন উৎসবের জন্য কয়েক কোটি খরচ কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কংগ্রেস প্রভাবিত ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সত্যানন্দ দত্ত। তিনি বলেন, “ভাবতেই অবাক লাগছে, কোন সরকারকে আমরা জিতিয়ে আনলাম! রাজ্য জুড়ে ক্লাবগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী অর্থ দান করছেন। আর পরিবহণ শিল্পকে বাঁচাতে ভাঁড়ারে টান পড়ে যাচ্ছে? ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতে চলল, ডিসেম্বর মাসের পুরো বেতনই কর্মীরা পাননি। এমন পরিস্থিতিতে কেন উৎসবের আয়োজন হল, সেটাও আমাদের মাথায় ঢুকছে না।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি তুলে ধরতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তীব্র আর্থিক সঙ্কট সত্বেও এই উৎসবের আয়োজন করেছেন। উৎসব নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তাঁরা দারুণ ভাবে প্রশংসা পেয়েছেন। তাতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রতি বছর এই উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানুষের এমন সাড়া পাব ভাবিনি।”
উৎসবে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো যে ‘ভুল’ তা স্বীকার করে নেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “কোথাও কোথাও রাত ১১টা, সওয়া ১১টা পর্যন্ত মাইক বেজেছে সেটা ঠিক। তবে সর্বত্র এটা হয়নি। এত বড় উৎসবে এই ধরনের ত্রুটি হতেই পারে। আগামী বছর থেকে যাতে এমন না-হয় সেদিকে লক্ষ রাখব।” মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে যাতে উৎসব না-হয় সেই ব্যাপারেও নজর রাখা হবে বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি এ দিন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, “উৎসবের শুরু থেকেই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী আমাদের সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন। তিনি উৎসব নিয়ে এতই ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েছিলেন যে উৎসব উপলক্ষে দেশবন্ধুপাড়ায় আয়োজিত একটি খেলার মাঠেও দর্শক হিসাবে ঢুকে পড়েন। সেই জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর মন্তব্যকে অবশ্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে দাবি করেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি এ দিন বলেন, “এক জন মন্ত্রী এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা কেন বলছেন স্পষ্ট নয়। আমরা উৎসব বয়কট করিনি। কাউকে উৎসবে যোগ দিতেও বারণ করিনি। আমরা বলেছি, সরকারের আর্থিক সঙ্কট চলছে। এ সময়ে উৎসব না করলে ভাল হত। দেশবন্ধুপাড়ার যে উৎসবে আমি গিয়েছি, সেখানে প্রতি বছরই আমি যাই। এ বারও উদ্যোক্তারা অনুরোধ করায় ও আমি ক্রিকেট ভালবাসি বলে পনেরো মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম।” |