দুই জেলাতেই কোণঠাসা বামফ্রন্ট। অথচ, দুই শহরেই পুরসভা এখনও তাদের দখলে। বর্ধমান ও হলদিয়া পুরসভার ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মাধ্যমিকের শব্দবিধির নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়ায় তাই ‘রাজনীতি’ দেখছে সিপিএম।
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় পুরসভা সংলগ্ন রবীন্দ্র-নজরুল মুক্তমঞ্চে যখন পুলিশ হাজির হয়, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বক্তৃতা করছিলেন। মাঝপথেই বক্তৃতা থেমে যায়। পুলিশ জানিয়ে দেয়, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে হাইমাদ্রাসার পরীক্ষা, শুক্রবার থেকে মাধ্যমিক। মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। স্থানীয় কিছু লোকজন ভবানীপুর থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। পুর কর্তৃপক্ষ আপত্তি করতে গেলে পুলিশ জানায়, বিধিভঙ্গের কারণে মাইক বাজেয়াপ্ত করা হবে। পিছু হটতে বাধ্য হয় পুরসভা। পবিত্রবাবু পরে খালি গলায় বক্তৃতা শেষ করেন।
বর্ধমানে অবশ্য খোলা জায়গায় মাইক বাজানো হচ্ছিল না।
যে টাউন হল চত্বরে এক দিন আগেই মাইক বাজিয়ে যুবকল্যাণ দফতর আয়োজিত ‘বিবেক মেলা’ হয়ে গিয়েছে, সেখানে ঘেরা মণ্ডপে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পুরসভার সাংস্কৃতিক কমিটি। সকালে এক দফা অনুষ্ঠান হয়েও যায়।
কিন্তু দুপুরে বর্ধমান (উত্তর) মহকুমাশাসক নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানান, অনুষ্ঠান করতে গেলে টাউন হলের ভিতরে করতে হবে। ভিতরে কো-অর্ডিনেশন কমিটির একটি অনুষ্ঠান চলায় উদ্যোক্তা ও শিল্পীদের সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকতে হয়।
বর্ধমানের পুরপ্রধান আইনুল হকের বক্তব্য, “মাইক বাজানো হয়নি। সাউন্ডবক্স বাজিয়ে প্যান্ডেলের ঘেরাটোপে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। শব্দ বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। সংকীর্ণ রাজনীতির চাপেই প্রশাসন পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।” মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী পাল্টা বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে মাইক ব্যবহারে নিষেধাক্ষা জারি হয়েছে। পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে কী করে?” শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা কাউন্সিলর খোকন দাসের মতে, “প্রশাসন আইন মেনেই অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে। এ নিয়ে কারও অভিযোগ থাকা উচিত নয়।”
হলদিয়ার পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ অবশ্য ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমাদের একটা ছোট ভুল হয়ে গিয়েছিল। আগেও এ ভাবে অনুষ্ঠান করেছি, তখন কিছু হয়নি। যা হল, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের সুধাংশু মণ্ডল পাল্টা বলেন, “দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার দম্ভে এ ভাবে বিধি ভেঙে অনুষ্ঠান চালানো অভ্যাস করে ফেলেছিল সিপিএম। পুর কর্তৃপক্ষের ভুলে বিশিষ্টজনদেরও অপমান হল।” |