সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে লিংডো কমিশন যে-সব সুপারিশ করেছে, তা হুবহু মেনে চলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের কর্তারা। এই অবস্থায় কী করে আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে সুষ্ঠু ভাবে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করা যায়, তার পদ্ধতি সুপারিশ করতে ছ’জন উপাচার্যকে নিয়ে কমিটি গড়েছে ওই সংসদ। সেই কমিটি এপ্রিলের মধ্যে তাদের সুপারিশ জানিয়ে দেবে উচ্চশিক্ষা সংসদকে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের কলেজে কলেজে গোলমাল লেগেই রয়েছে। এই সমস্যার মোকাবিলায় অভিন্ন বিধি তৈরি করে সব কলেজে ভোট হবে বলে আগেই জানিয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। হিংসা রুখতে বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কলেজে একসঙ্গে ভোটের কথাও ভাবা হয়েছে। বিশেষ করে মহানগরীর যে-সব কলেজে এখনও নির্বাচন হয়নি, সেখানে এই পদ্ধতিতে পাঁচ দফায় ভোটের নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কী ভাবে নির্বিঘ্নে নির্বাচন করা যেতে পারে, উচ্চশিক্ষা সংসদ তা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনাও করেছে। সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিত জানিয়ে দিয়েছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নীতি তৈরির ক্ষেত্রে লিংডো কমিশনের কিছু সুপারিশ গ্রহণ করা গেলেও তার সব ক’টি মেনে চলা সম্ভব নয়।
লিংডো কমিশনের সব সুপারিশ মানতে অসুবিধা কোথায়?
সুগতবাবু বলেন, “লিংডো কমিশনের সুপারিশে নানা ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন, উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ না-হলে কোনও পড়ুয়া প্রার্থী হতে পারবেন না। অথচ মাত্র ৫০ শতাংশ উপস্থিতির হার নিয়েও অনেক ছাত্র আদালতের রায়ে পরীক্ষায় বসতে পেরেছেন। তা হলে কোন পড়ুয়াকে নির্বাচনে যোগ দিতে দেওয়া হবে আর কাকে যোগ দিতে দেওয়া হবে না, সেটা কী ভাবে ঠিক করা যাবে?” ছাত্রভোট কী ভাবে বিঘ্নহীন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের কর্তারা মঙ্গলবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তার পরেই সুগতবাবু এ কথা জানান।
পড়ুয়াদের উপস্থিতির বিষয়টি ছাড়াও ছাত্রভোটে রাজনীতির প্রসঙ্গ তোলেন সংসদের চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক রং বাদ দিয়েই ছাত্র সংসদের নির্বাচন করার জন্য সুপারিশ করেছে লিংডো কমিশন। উচ্চশিক্ষা সংসদ এটাও সমর্থন করছে না। সুগতবাবু বলেন, “কারও রাজনৈতিক বিশ্বাস আর রাজনৈতিক সংঘাত তো এক জিনিস নয়। তাই ও-দু’টোকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।”
গোলমাল এড়াতে আগামী বছর থেকে লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তা হলে এখন কমিশনের সুপারিশগুলি নিয়ে অসঙ্গতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে কেন?
সুগতবাবু বলেন, “লিংডো কমিশনের রিপোর্ট ভাল ভাবে বেশ কয়েক বার পড়ে দেখা গিয়েছে, তাদের সব সুপারিশ পুরোপুরি রূপায়ণ করা সম্ভব নয়। ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটিকে সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তা ছাড়া দেশের প্রায় কোনও রাজ্যেই এই সব সুপারিশ কার্যকর হয়নি।” উপাচার্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি নিজেদের সুপারিশ জানানোর আগে ওই রাজ্যগুলির সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানান সুগতবাবু। তিনি বলেন, কমিটির সুপারিশ পেলে তা খতিয়ে দেখে এবং আলোচনা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে জুনের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হবে। |