পড়া না পারায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর চুল ছিঁড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট দেভোগ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর জেরে পঠন-পাঠন বন্ধ থাকে। স্কুল পরিদর্শক গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শান্ত হয় জনতা। বসিরহাট নতুন চক্রের পরিদর্শক দীপঙ্কর কর্মকার বলেন, “পরিচালন কমিটি, শিক্ষক, ওই ছাত্রী ও তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমার কাছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে মেয়েটি এখন সুস্থ রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক সংসদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।”
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রাথমিক স্কুলে ২০০ ছাত্রছাত্রী ও ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রেশমা খাতুনের বাড়ি স্কুলের কাছে দক্ষিণ পাড়ায়। ঘটনার দিন প্রথম পিরিয়ডে বাংলা পড়াচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলি। পড়া না পারায় রেশমা-সহ কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে তিনি বকাবকি করেন। এর পরেই আচমকা তিনি রেশমার চুলের মুঠি ধরে টানেন বলে অভিযোগ। টানের চোটে রেশমার মাথার খানিকটা চুল উঠে যায়। যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে রেশমা। অভিযোগ, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রেশমা-সহ ক্লাসের অন্যদের বিষয়টি বাইরে বলতে নিষেধ করেন তিনি। রেশমা বাড়ি ফিরলে বিষয়টি সকলে জানতে পারে। মঙ্গলবার সকালে অভিভাবক-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। দরজায় তালা দিয়ে দেন। বিক্ষোভের জেরে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক। তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। খবর পেয়ে পরিচালন সমিতির সদস্যেরা প্রধান শিক্ষককে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে বাঁচান।
স্কুলে পরিদর্শক না আসা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে জানান বাসিন্দারা। দুপুরে পরিদর্শক স্কুলে আসেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরে দুপুরে বিক্ষোভ ওঠে। রেশমার বাবা আব্দুল রফিকুল মোল্লা বলেন, “পড়া না করলে শিক্ষক বকবেন, মারবেন তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি যেভাবে চুল ছিঁড়েছেন তা কখনওই সমর্থন করা যায় না। এমন একটা অন্যায় করার পরে কাউকে তা না বলার জন্য বলা হয়েছিল।” রেশমার বক্তব্য, “পড়া না করার জন্য আমার চুল ধরে টান মারেন মাস্টার মশাই। তাতে পিছনের চুল ছিঁড়ে যায়।” বিষয়টি যে অন্যায় হয়েছে তা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলি বলেন, “পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা যাতে ভাল ফল করে সে জন্য কয়েক জনকে আলাদা করে পড়াচ্ছিলাম। বারবার বলা সত্ত্বেও বাংলা বিষয়ের পড়া না করায় আচমকা রাগ হয়ে যায়। মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। তাতে এমন কাণ্ড হবে বুঝতে পারিনি। ঘটনায় আমি অনুতপ্ত।” |