|
|
|
|
‘বসত’-বাড়িতেই ‘বাণিজ্য’, কর-সংগ্রহে ফাঁকি খড়্গপুরে |
বরুণ দে • খড়্গপুর |
তিন-তলা পাকা বাড়ি। সেখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অফিস। কিন্তু, ওই বাড়ি থেকে পুরসভার কর আদায় হয় বছরে মাত্র ১১২০ টাকা!
এক-দু’টি নয়, এমন অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে রেলশহর খড়্গপুরে। উন্নয়নে গতি আনতে অর্থ প্রয়োজন। অনেক সময়েই সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ-সাহায্য মেলে না। সে ক্ষেত্রে আয় বাড়াতে পুরসভারই নানা পদক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু, খড়্গপুরের মতো শহরে তেমন পদক্ষেপ হয়নি, হয় না বলেই অভিযোগ। যেটুকু যা হয়েছে তা-ও অকিঞ্চিৎকর। কর-আদায়ের ক্ষেত্রে পুর-কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলেও একাংশ শহরবাসীর অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, বড়-বড় বাড়ির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ কর-বাবদ আদায় হওয়ার কথা, তা হয় না। কিন্তু কেন? খড়্গপুরের পুরপ্রধান জহরলাল পালের বক্তব্য, “আমরা ক্ষমতায় আসার আগে শহরের একটি বাড়িও ‘কমার্সিয়াল’ (বাণিজ্যিক) বলে চিহ্নিত ছিল না। সবই ‘রেসিডেন্সিয়াল’ (বসতি) বলে দেখানো হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ‘রেসিডেন্সিয়াল’ বাড়ি থেকে যে পরিমাণ অর্থ কর-বাবদ আদায় হওয়ার কথা, তাই হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “শহরে অনেক বহুতল রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার অফিস চলে। এই বহুতলগুলিকে ‘কমার্সিয়াল’ বলেই চিহ্নিত করা উচিত। তাতে পুরসভার আয়ও বাড়ত।” সেই লক্ষ্যে এত দিন পরে সম্প্রতি পুরসভা পদক্ষেপ শুরু করেছে বলে খবর।
তবে এই কর আদায়ের বিষয়টি নিয়ে রেলশহরে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, আগের কংগ্রেস পুরবোর্ডই বহুতলগুলিকে কর-ছাড় পাইয়ে দিয়েছিল। অভিযোগ উড়িয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশংকর পাণ্ডের জবাব, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এখন এমন কথা বলা হচ্ছে।” ক’দিন আগেই তৃণমূল-পরিচালিত পুরবোর্ডের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে কংগ্রেস। ২০১০-এর পুরভোটের পর থেকে এখানে কংগ্রেসের সমর্থনেই পুরবোর্ড চালাচ্ছিল তৃণমূল। কিন্তু, পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। পাল্টা হিসেবে তৃণমূলও জানিয়ে দেয়, কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করলেও বোর্ড চালাতে তাদের অসুবিধা হবে না। তাদের বরং দাবি, গরিষ্ঠসংখ্যক কাউন্সিলরই বর্তমান বোর্ডের পাশে রয়েছেন।
খড়্গপুর শহরের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রেল-এলাকা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দফতর রয়েছে এখানে। শহর-এলাকাও উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত হচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসতি। শহরবাসীর বক্তব্য, পুর-কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলে বছরে অন্তত এক কোটি টাকা কর-বাবদ আদায় হতে পারে। এই বক্তব্য উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুর-কর্তৃপক্ষও। পুরপ্রধান বলেন, “এ বার আমরা কর-আদায় বাড়াতে জোর দিচ্ছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও হয়েছে।” পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে একাধিক এমন বহুতল রয়েছে, যেখান থেকে পুরসভার কর-আদায় হয় বছরে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। অথচ, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এ-সব বহুতল থেকে কর-বাবদ আদায় হতে পারে ২৮ থেকে ৩৬ হাজার টাকা! কর দফতরের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান-পারিষদ মহম্মদ আকবর বলেন, “আগের পুরবোর্ড কর আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসনী ছিল। বহুতল, বিশেষ করে যেখানে ব্যবসায়িক কাজকর্ম হয়, বিভিন্ন সংস্থার অফিস চলে, সে-সব বাড়ির জন্য যে পরিমাণ কর ধার্য হওয়া উচিত, তা করা হয়নি। প্রয়োজনে আমরা ফের নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করাব।” তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের দাবি, শহরে ইতিমধ্যেই ১৬৫টি বাড়ি ‘কমার্সিয়াল’ হিসাবে চিহ্নিত করাও হয়েছে। ফলে, কর হিসেবে বাড়তি কয়েক লক্ষ টাকা আদায়ের সম্ভাবনা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। মূল্যায়ন হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই অনুমান।
তবে এ ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা’ কতটা বজায় থাকে, তা-ও দেখার। |
|
|
|
|
|