সম্পাদকীয় ২...
নীরব বিপ্লব
ণতন্ত্রে উন্নয়ন কী করিয়া ঘটে, তাহা মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণী গৃহবধূ প্রমাণ করিলেন। বিবাহের পরে অনিতা নারে আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাঁহার শ্বশুরবাড়িতে শৌচাগার নাই, খোলা মাঠে যাইতেই সকলে অভ্যস্ত। এই রীতি মানিতে রাজি হন নাই তিনি, সত্বর বাপের বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া স্বামীকে জানাইয়াছিলেন, শৌচাগার না থাকিলে তিনি শ্বশুরগৃহে যাইবেন না। চাপে পড়িয়া স্বামী পঞ্চায়েতকে জানাইয়াছেন, পঞ্চায়েত তড়িঘড়ি শৌচাগার করিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছে। অতঃপর গ্রামের অপরাপর গৃহেও শৌচালয় হইয়াছে। ইহাতে প্রমাণ হয়, শৌচাগার করিবার অর্থ বরাদ্দ হইয়াছিল, তাহা পঞ্চায়েতের হাতেও ছিল, কিন্তু সদিচ্ছা বা উদ্যোগের অভাবে তাহা হইয়া উঠে নাই। তরুণী বধূটি প্রত্যয়ের সহিত তাহার প্রাপ্য দাবি করিয়াছে, তাই স্থানীয় প্রশাসন সাড়া দিতে বাধ্য হইয়াছে। শৌচাগারের ন্যায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করিবার দায়ও যে প্রশাসন সম্পূর্ণ এড়াইয়া যাইতে পারে, তাহার কারণ খাতায়-কলমে বিষয়টি যতই গুরুত্বপূর্ণ হউক, কার্যত তাহার জন্য স্থানীয় মানুষ সরব এবং অসহিষ্ণু হইয়া উঠেন না। ইহার দুইটি কারণ। এক, শৌচাগার আজও অধিকাংশ নাগরিকের নিকট জরুরি বলিয়া প্রতিপন্ন হয় নাই। যদিও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য অসুখ হইলে স্বল্পবিত্ত পরিবারগুলি প্রচুর ব্যয় করিয়া থাকে, এমনকী ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়ে, তবু সামান্য ব্যয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নাগরিকরা করিয়া উঠিতে পারেন না। ইহা জ্ঞানের অভাব, অথবা উদ্যোগ কিংবা জনসংগঠনের অভাব, তাহা লইয়া তর্ক হইতে পারে। কিন্তু কারণ অন্বেষণ অপেক্ষা প্রতিকারের আয়োজন অধিক জরুরি। দুই, শৌচাগারের প্রয়োজন অনুভব করিলেও গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত-প্রশাসনের নিকট তাহা দাবি করেন না। সরকারি কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা নাগরিকের প্রতি উদাসীনতা ও অসৌজন্য প্রকাশ করিবেন, ইহা মানুষ ধরিয়াই লইয়াছেন। তাই পুষ্টি, স্বাস্থ্য বা শৌচ সংক্রান্ত নানা প্রকল্পে বহু অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও অপুষ্টি, অস্বাস্থ্য কমিতেছে না। বরং সহজে প্রতিরোধযোগ্য অসুখগুলির চিকিৎসায় বহু অপচয় ঘটিতেছে। তরুণী গৃহবধূটি যে নীরব বিপ্লব করিলেন তাহা প্রমাণ করে, সমাজে ও রাজনীতিতে অন্যায়-অবিচার যতই প্রবল বলিয়া প্রতিভাত হউক, ন্যায্য ও স্পষ্ট দাবিকে প্রশাসন সহজে তাচ্ছিল্য করিতে পারে না। প্রাপ্য আদায় করিবার শক্তিকেই ‘ক্ষমতা’ বলা হয়। যাঁহার ক্ষমতা আছে, তিনি সক্ষম। সদ্য-বিবাহিত গৃহবধূর যে সক্ষমতা রহিয়াছে, তাহা গ্রামের অন্যান্য বধূ-কন্যাদের ছিল না, এমন নহে। কিন্তু ইতিপূর্বে মহিলারা ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ করেন নাই, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিকট নিজেদের দাবি পেশ করিবার উদ্যোগ করেন নাই। কেবল শৌচাগার নহে, মহিলা এবং শিশু উন্নয়নের নানা প্রকল্পের বিষয়েই এই কথা প্রযোজ্য। কেন বিপুল অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি যথাযথ কাজ করিতেছে না, কেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক, ঔষধ, কর্মী রাখা সত্ত্বেও সেগুলি বন্ধ পড়িয়া থাকে, কেন বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক থাকিলেও ছাত্রদের অক্ষরজ্ঞান হইয়া ওঠে না, তাহার কারণ খুঁজিলে স্পষ্ট হয়, এই বিষয়গুলি লইয়া সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কার্যত নাগরিক দাবিতে পরিণত হয় না। নববিবাহিতা বধূটি দেখাইল, চাহিতে জানিতে হয়। পরিবার হইতে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত হইতে রাষ্ট্র, এই ভাবেই ব্যক্তির প্রয়োজনের প্রতি রাষ্ট্রকে মনোযোগী করিতে হয়। ইহাই গণতন্ত্রের পথ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.