পুরনো এক হত্যা মামলার তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্ট ওসি, মামলার তদন্তকারী অফিসার ও ফরেনসিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সঞ্চালকের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ দায়ের করল সিআইডি। আপাতত তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে গোয়েন্দারা। তবে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে এই তিনজনকে গ্রেউতারের সম্ভাবনা আদৌ উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল।
২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে সোনাপুরের যোগদল এলাকায় হরকান্ত দলৈ (৪৫), তাঁর স্ত্রী স্বপ্না দলৈ (৪০) এবং সন্তান সবিতা দলৈ (১২), অতুল দলৈ (৬), প্রতিভা দলৈ (৯) ও আত্মীয়ের ছেলে তুকুন দলৈ (৬)-কে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে তুকুন ও অতুলের মাথা দু’টি প্রথমে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ছিল হত্যার আগে দুষ্কৃতীরা দুই নাবালিকাকে ধর্ষণও করে। পর দিন শল্য চিকিৎসক ধনীরাম বরুয়ার ‘হার্ট সিটি’ থেকে দু’টি বাচ্চার মাথা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ‘হার্ট সিটি’ আক্রমণ করে। আগুন লাগায়। এমনকী স্বপ্নাদেবীর বাড়িতেও দু’দিন পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ ছিল, অদ্ভুত বিষয় নিয়ে গবেষণা চালানো ধনীরাম ডাক্তারই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। পুলিশ ‘হার্ট সিটি’-র ৬ কর্মীকে আটকও করে। ধনীরামবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও শেষ পর্যন্ত কিছু প্রমাণ হয়নি।
গত মাসে রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী অকণ বরার একসময়ের ঘণিষ্ঠ, দুলাল বরা অভিযোগ তোলেন, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা মন্ত্রী অকণ বরার মস্তিষ্কপ্রসূত। দুলালবাবুর দাবি ছিল: অকন, তাঁর ব্যবসায়ী সঙ্গী বিজিত শইকিয়া ও ঘণিষ্ঠ মামণি গগৈয়ের পুত্র ‘হার্ট সিটি’-র জমি দখল করে সেখানে পাঁচ তারা হোটেল তৈরির ছক কষছিলেন। বিজিতবাবু অকণের কথামতো অর্জুন বরদলৈ নামে এক ভাড়াটে হত্যাকারীকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে হত্যাকাণ্ড করান। শিশুদের মাথা কেটে অর্জুনই হার্ট সিটির ভিতরে ছুড়ে ফেলেছিল। স্থানীয় থানার ওসি সব জানতেন। তিনিই সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাটের জন্য যোগদলে স্বপ্নাদেবীর ঘরে আগুন লাগান। হার্ট সিটি ভাঙচুরের সময়ও পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল। মন্ত্রী সব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও, এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সিআইডি ফের নতুন করে তদন্ত শুরু করে। গত কাল সোনাপুরের তৎকালীন ওসি প্রণব ডেকা, হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার মতলিব চৌধুরী ও ফরেনসিক বিভাগের তৎকালীন উপ-সঞ্চালক পুষ্পকুমার বরুয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট ও তদন্ত বিপথে পরিচালিত করার অভিযোগে এজহার দাখিল করে সিআইডি। এজাহারে সিআইডি জানায়: ঘটনার পরে প্রণব ডেকা নিজে উপস্থিত থেকে হত্যাকাণ্ড যে ঘরে হয়েছিল সেটি পুড়িয়ে ফেলেন। নষ্ট হয় সব তথ্যপ্রমাণ। ধর্ষণের অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তা এড়িয়ে যায়। দুই বালিকার পোষাক তদন্তকারী অফিসাররা জমা নেননি। ফলে তাও পুড়ে যায়। পুষ্পবাবুর কাছে যা তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়েছিল পরে তা সিআইডিকে ফেরত না দিয়ে তিনিই নষ্ট করে ফেলেন। ইতিমধ্যে প্রণববাবুকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছেন সিআইডি অফিসারেরা। |