ভারসাম্যের ভাবনা প্রণবের
চাপ থাকলেও সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে না
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেটে লড়াই বেধেছে রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির। রাজনৈতিক দাবি বলছে, সামাজিক প্রকল্পগুলিতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হোক। অর্থনৈতিক যুক্তি বলছে, রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একশো দিনের কাজ বা জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের পিছনে খরচে রাশ টানা হোক।
এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বাজেটে মধ্যপন্থা নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। সেই মধ্যপন্থা হল, কোনও সামাজিক প্রকল্পেই গত বাজেটের তুলনায় বরাদ্দ কাটছাঁট করা হবে না। কিন্তু বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ানোও হবে না। সেই অনুযায়ীই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মতো সামাজিক মন্ত্রকগুলিতে খরচ বেঁধে রাখার নির্দেশ যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রকের তরফে।
গ্রাম ও শহরের গরিব মানুষের সামাজিক প্রকল্পগুলিকে মূলধন করেই গত লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরেছিল মনমোহন-সরকার। ইউপিএ-সরকারের আট বছরের মাথায় এই ধরনের ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পের সংখ্যা তেরোয় এসে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। গত বছর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ‘মোট বাজেট বহর’ বা ‘গ্রস বাজেটারি সাপোর্ট’-এর পরিমাণ বাড়িয়ে ৪.৪ লক্ষ কোটি টাকা স্থির করেছিলেন। এই ‘গ্রস বাজেটারি সাপোর্ট’-এর পরিমাণই ঠিক করে, পরিকল্পনা খাতে বা নতুন পরিকাঠামো ও সামাজিক ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে কত অর্থ ব্যয় হবে। গত বাজেটে যা ১৮ শতাংশ বাড়িয়েছিলেন প্রণব। কিন্তু এ বার? যোজনা কমিশন সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় এ বার মোট বাজেটের বহর ১১ শতাংশের বেশি বাড়াতে রাজি নয় অর্থ মন্ত্রক। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি।
সমস্যা হল, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনাকালের (২০১২-’১৭) এটাই প্রথম বছর। তাই সব মন্ত্রকই যোজনা কমিশনের কাছে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ দাবি করছে। যোজনা কমিশন চাইছিল, মোট বাজেট বহর ১৮.৫ শতাংশ বাড়ানো হোক। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, না হলে ‘মাত্র’ ৫০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ পেলে তা বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে বিলি করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি হল, সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৯%-য় নেমে আসবে। গত বছর যা ছিল ৮.৪%। আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়ায় এবং ভর্তুকির বহর বেড়ে যাওয়ায় রাজকোষ ঘাটতি ৪.৬%-র থেকে অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও চাইছে, ভর্তুকির বহর কমিয়ে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানুক সরকার। না হলে তাদের পক্ষেও সুদের হার কমানো মুশকিল হয়ে যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘আর্থিক বাজেটেই রাজকোষ ঘাটতি কমানোর প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে শুরু করা হোক।’ অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন যে, সামাজিক ক্ষেত্রে খরচে লাগাম টানার এটাই শেষ সুযোগ। কারণ আগামী বছরের বাজেট তৈরি হবে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রকগুলি থেকে যে পরিমাণ অর্থের দাবি উঠেছে, তা কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রায় অপরিবর্তিতই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বাজেটে গ্রামোন্নয়নে মোট বরাদ্দ হয়েছিল ৭৪,১৪৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পেই বরাদ্দ হয়েছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ আগামী বছরেও চলবে। সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণ বছরে ২ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ওই টাকাতেও একশো দিনের কাজ হতে পারে। কিন্তু আম-আদমির মন জয়ে সনিয়া গাঁধীর প্রধান অস্ত্র এই একশো দিনের কাজ প্রকল্পে চাইলেও যে বরাদ্দ কমানো সম্ভব নয়, তা মানছে অর্থ মন্ত্রকই। যোজনা কমিশন সূত্রের খবর, সেচের ক্ষেত্রে ‘অ্যাক্সিলারেটেড ইরিগেশন বেনিফিট প্রোগ্রাম’-এ এই বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। জলসম্পদ মন্ত্রক চাইছে, তা বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হোক। কিন্তু যোজনা কমিশনের পক্ষে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা সম্ভব নয় বলে একটি সূত্রের দাবি। ছ’বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য আইসিডিএস-প্রকল্পের বরাদ্দ ৭,৬০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার দাবি উঠেছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ শৌচাগার প্রকল্পের জন্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার দাবি তুলেছেন। গত বছর যা ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। যোজনা কমিশন মনে করছে, এই প্রকল্পে এ বার আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ দেওয়া সম্ভব হবে না। পানীয় জল প্রকল্পের জন্যও অতিরিক্ত বরাদ্দ চাইছেন রমেশ। সর্বশিক্ষা অভিযান থেকে শুরু করে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, ইন্দিরা আবাস যোজনা, জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জলের মতো প্রকল্পগুলিও প্রায় অপরিবর্তিতই থাকবে বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.