নির্বাচন কমিশন না আদালত, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল কংগ্রেস তথা কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার।
গত কয়েক দিন ধরেই কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ দাবি করছেন, নির্বাচনী আচরণবিধিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক। এবং তা প্রয়োগের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হোক আদালতের হাতে। নির্বাচন কমিশনের বদলে আদালতই বিচার করে দেখুক, কোনও নেতা ভোট প্রচারে গিয়ে আচরণবিধি ভেঙেছেন কি না। বিজেপি-র অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে এখন মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকেও আলোচনা করতে চাইছে কেন্দ্র। সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে বিজেপি আজ জানিয়েছে, আচরণবিধি ভাঙার কোনও অভিযোগ আদালতের হাতে গেলে তা নিষ্পত্তির ঢের আগে নির্বাচনই শেষ হয়ে যাবে। কমিশনকে সমীহ করে চলার প্রয়োজনই থাকবে না নেতাদের। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার ঘটনা বেড়ে যাবে।
আগামিকাল দুর্নীতি দমন নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক হওয়ার কথা। বিজেপি-র দাবি, ওই বৈঠকে আচরণবিধি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। যার মূল বক্তব্য হল, আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ সত্য কি না, আদালতই তা যাচাই করুক। বিরোধীদের যুক্তি, গোটা প্রক্রিয়াটির মধ্যে দিয়ে আসলে নির্বাচন কমিশনের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস তথা ইউপিএ। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির কথায়, “নির্বাচন কমিশনকে নখদন্তহীন একটি সংস্থা করার চেষ্টা করছে সরকার। কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ মন্ত্রক অবশ্য জানিয়েছে, আগামিকালের বৈঠকে এই ধরনের কোনও বিষয়ই আলোচনায় ওঠার কথা নেই। |
উত্তরপ্রদেশে চলতি ভোট পর্বে কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার করার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনের কাছে। বাদ যাননি খোদ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদও। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে থামাতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে হয় কমিশনকে। একই ভাবে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মা ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধেও। স্বভাবতই দলীয় নেতাদের নামে একের পর এক অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি কংগ্রেস শিবির। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি দিনকয়েক আগে বলেই ফেলেন, “আশা করি এ বারের ভোট মিটলে আদর্শ আচরণবিধিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাববে নির্বাচন কমিশন।”
এমনকী কেউ নির্বাচন আচরণবিধি ভেঙেছেন কি না, তা ঠিক করা এবং তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর অধিকার আদৌ নির্বাচন কমিশনের রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা হয় কংগ্রেসের তরফে। বিজেপি জানিয়েছে, এই বিষয়ে খোদ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। এনডিএ সরকারের আমলে নিজেদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এম এস গিল। অরুণ জেটলি বলেন, “সে সময়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় নির্বাচনী আচরণবিধি রূপায়ণ করার অধিকার রয়েছে কমিশনের। আসলে গোটা বিষয়টি আদালতের হাতে চলে গেলে কমিশনের বস্তুত ভোট নেওয়া আর গণনা করা ছাড়া কোনও ভূমিকাই থাকবে না। আর কংগ্রেসও তাই চায়।” বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছে না কংগ্রেস শিবির। আইনমন্ত্রী খুরশিদ অবশ্য আজ জানিয়েছেন, সরকারের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে জল্পনা জিইয়ে রেখে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, “নির্বাচনী সংস্কার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। যদি সব দল চায়, তা হলে এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা যেতেই পারে।” এর আগে সিএজি যখন উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের কাজকর্ম ও দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধেও খড়্গহস্ত হয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, সিএজি-র ভূমিকা এবং অধিকার নিয়েও। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি-র দাবি, নির্বাচন কমিশন এখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করায়, তারই ডানা ছাঁটাতে তৎপর হয়ে উঠেছে কেন্দ্র। |