‘নীলকণ্ঠ’ বাবুজির মুখে এখনও বহেনজির নাম
স্যরি।
আহা! বললাম তো স্যরি।
হেলিকপ্টার থেকে নামার পর থেকেই জনতার উল্লাস। এতক্ষণ প্রতিটি বাক্যেই করতালি। জয়ধ্বনি। স্লোগান। ‘বাবুজি নেহি আঁধি হ্যায়, বুন্দেলখণ্ড কা গাঁধী হ্যায়’। কিন্তু যেই না বাবুজি ভুল করে মায়াবতীকে ভোট দিতে বললেন, শ্মশানের নীরবতা। মঞ্চে নেতাদের মুখ ভার। একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন। এ কী বললেন বাবুজি?
আর বাবুজি? তিনি নির্বিকার। একটু হেসে বললেন, ভুল হয়ে গিয়েছে। বিএসপি নয়, ভোট দিন বিজেপিকে। জনতা চুপ। তাঁরা বাবুজির উপর ‘অন্যায়ের’ বদলাই নিতে চান। বাবুজির পিঠে যে বহেনজি ছুরি মেরেছেন, তাঁর নাম মুখে আসে কী করে? কিন্তু বাবুজি নির্লিপ্ত, শীতল। চোখের সামনে পাঁচ-পাঁচটি লাশ পড়ে গিয়েছে, বাবুজির তাতেও কোনও হেলদোল নেই। মঞ্চে একটু-আধটু ভুল হলে কী এসে গেল?
বাবুজি হলেন বাবু সিংহ কুশওয়াহা। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের দশ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে আসার পর মায়াবতী তাঁর মন্ত্রিত্ব কেড়েছেন। লখনউয়ের কালিদাস মার্গে নিজের ঠিক পাশের বাড়ি থেকেও বাবু সিংহকে উৎখাত করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। পাশের বাড়ি তো না হয় সরকারি বাংলো, কিন্তু বাবু সিংহ তো ছিলেন ঘরের লোক। মায়াবতীর বাড়িতেই থাকতেন। মায়াবতীর যাবতীয় ‘অর্থ-অনর্থ’ কোনওটাই বাবুজিকে ডিঙিয়ে হত না। সেই বাবুজিই এখন বহেনজির কাছে ‘ব্রাত্য’। এই দুর্নীতির জেরে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কেউ আত্মহত্যা করেছেন। সিবিআই তদন্তে নেমেছে। কিন্তু বাবুজির মুখে-চোখে তার কোনও ছাপ নেই।
বসপা ছাড়ার পর বাবুজিকে বিজেপি আশ্রয় দিল। কংগ্রেস-সপা-বসপার সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির মোকাবিলায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) ভোট টানতে। কিন্তু বিতর্কের চোটে সদস্যপদ স্থগিতও রাখতে হল। কিন্তু বাবুজি মঞ্চে মঞ্চে বহেনজির বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করছেন, আর বিজেপিকে ভোট দিতে বলছেন। বিজেপির সঙ্গে লোক দেখানো দূরত্ব রাখতে ‘সংরক্ষণ বাঁচাও মঞ্চ’ও গড়েছেন।
বাবু সিংহ কুশওয়াহা। ছবি: পি টি আই
কিন্তু ভুল করে এখনও কখনও-সখনও বহেনজির নাম মুখে চলে আসে। এত দিনের অভ্যাস! রাতারাতি যায় কী করে? ওরাইয়ের সভায় তাই বলেই ফেললেন, “এ বারের ভোটে কংগ্রেস-সপা-বিজেপিকে হারান।” বলেই বুঝলেন, কী মারাত্মক ভুলটা হয়েছে। শুধরে নিলেন। বললেন, “বিজেপি নয়, বিএসপিকে হারান।” কিন্তু ততক্ষণে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চিল-চিৎকার করে আরও সাফাই দিলেন, “আমাকে অযথা দুর্নীতির অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রকে আমি এসেছি ২০০৯ সালে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে যা দুর্নীতি, তা আগেই হয়েছে। মুলায়ম সিংহ যাদব ও মায়াবতীর জমানায়। আমি মন্ত্রী থাকার সময় কোনও ফাইলই আসেনি আমার কাছে। মুখ খুললে অনেক কিছুই বেরোবে। আমি শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছি।”
বিজেপি শিবিরে অনেক দিনই কানাঘুষো ছিল। কিন্তু বাবু সিংহের এ হেন মুখ না খোলার রহস্য এখন ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। দলের এক শীর্ষ নেতাকে বাবু সিংহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “বলতে পারি, কিন্তু নাম ছাপানো যাবে না।” বললাম, ‘বেশ’। “শুনুন, এই যে মঞ্চে মঞ্চে গিয়ে বলছেন, মুখ খুললে অনেক কিছু বেরোবে। এর কী অর্থ? বাবু সিংহ খাতায়-কলমে বিজেপিতে না থাকলেও আসলে তো তিনি বিজেপির হয়েই প্রচার করছেন। কিন্তু মায়াবতীর বিরুদ্ধে মুখ না খোলার দিব্যি কে দিয়েছে বলুন তো?”
মানে?
“মানে খুব স্পষ্ট। প্রচারে গিয়ে মায়াবতীর বিরুদ্ধে ভোট চাইছেন বাবু সিংহ। বিজেপির উপকার করছেন। খুব ভালো কথা। কিন্তু মায়াবতী কি আজ পর্যন্ত একটি শব্দও উচ্চারণ করেছেন বাবুসিংহের বিরুদ্ধে? করেননি। কেন? কারণ, মায়াবতীর গোটা দুর্নীতি তিনি নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছেন। নীলকণ্ঠের মতো জেনেশুনে বিষ পান করেছেন। নির্বাচন হয়ে গেলে ওবিসি ভোটে জিতে আসা বিধায়করা যদি দল বেঁধে বহুজন সমাজ পার্টিতে যোগ দেন, অস্বাভাবিক নয়।” তা হলে কি মায়াবতীর হয়েই বিজেপিতে কাজ করছেন বাবু সিংহ? বাবু সিংহের সচিব সঞ্জয় দীক্ষিতের মতে, “তা কেন হবে? বহেনজি বাবুজিকে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু এটাও ঠিক, বহেনজির বিরুদ্ধে যদি বাবুজি মুখ না খোলেন, তা হলে বহেনজিও আরও সংযত হবেন। বাবুজির তো এটাই কৌশল।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.