উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শ্রদ্ধায় ভাষা শহিদ স্মরণ
কিছু বঞ্চনা, খানিকটা প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, বাকিটা আত্মবিমুখ বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্য। এই তিনের সঙ্গে লড়াই করেই এক দিকে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকায় অন্য দিকে আগরতলার উপান্তে আখাউড়া সীমান্তে জিরো পয়েন্টে মঙ্গলবার পালিত হল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা সরকারের যৌথ উদ্যোগে আখাউড়ায় এ দিন ‘ভাষা দিবসে’ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালেন দু’ দেশের জনগণই।
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে গুয়াহাটির বুকে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা তথা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন বাঙালি, অসমিয়া, কার্বি, বড়ো, খাসি, কোচ-সহ নানা ভাষাভাষী মানুষ। অসম সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি দফতর, অসম সাহিত্যসভা এবং কটন কলেজের বাংলা বিভাগের সহায়তায় জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে সকাল থেকে রাত অবধি আলোচনা, কবি সম্মেলন, গান, পাঠ, আলোচনাসভা, চলচ্চিত্র এমনকী জাদু প্রদর্শনও চলল। সেই সঙ্গে, অসম সাহিত্য সভা প্রাঙ্গণে বইয়ের হাট। পাশাপাশি, জাতীয় অনুবাদ কর্মশালাও। কটন কলেজে অসমিয়া ছোট গল্পগুলি বাংলায় অনুবাদের কর্মশালার উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক নিরুপমা বঢ়গোহাঁই। ভাষা সংস্কৃতি মিলনোৎসবে প্রকাশিত হল উত্তর-পূর্বের শৈব নাথ সম্প্রদায় নিয়ে হিরণ্ময় নাথের বই, মীর মোশারফ হোসেনকে নিয়ে দেবযানী দে-র গবেষণা গ্রন্থ ও পদুমি গগৈয়ের কাব্যগ্রন্থ ‘অনাবিল পোহরর স্পর্শ’। তিন দিন ধরে চলবে এই মিলনোৎসব। রং বং তেরং বললেন, “ভাষার বিবাদ, উপত্যকার বিবাদ এখন অতীত অধ্যায় মাত্র। মাতৃভাষার লড়াই নয়, মেলবন্ধনকেই তুলে ধরবে একুশ শতকের অসম।”
আখাউড়া সীমান্তে একুশের অনুষ্ঠান। ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী
তবে, মাতৃভাষা দিবসের সকালে ‘একুশের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনাসভায়, অসম সাহিত্যসভার সভাপতি রং বং তেরং, রামমোহন গ্রন্থাগারের অধিকর্তা কে কে বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্র গবেষক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য বা কবি আনিসুর জামান যখন নবপ্রজন্ম ও মাতৃভাষা চর্চা নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন শ্রোতার সংখ্যা ছিল বেশ কম। একুশের আলোচনাসভায় অংশগ্রহণকারীদের পোশাকেও ‘স্বদেশিয়ানা’র ছাপ ছিল না। মিলনোৎসবের অনুষ্ঠান সূচিটিও পুরোপুরি ইংরাজিতে। উদ্যোক্তাদের একজনের আক্ষেপ, “হয়তো একুশ শতকে এসে ব্র্যান্ড ও বিনোদনই বাঙালির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। ”
গত বছর ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সাহিত্যসভার প্রধান সম্পাদক পরমানন্দ রাজবংশী ঘোষণা করেছিলেন, “পরের বছর থেকে কেবল বাংলা নয়, অসমিয়া এবং অসমের সব ক’টি উপজাতির ভাষাভাষীকে নিয়ে একসঙ্গে সাহিত্য সভাই ভাষা দিবস পালন করবে।” কিন্তু ২০১২ তেও অসম সাহিত্য সভা, মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের অংশীদারমাত্র, প্রধান উদ্যোক্তা নয়।
বরাক উপত্যকায় শিলচর-সহ বিভিন্ন স্থানে ভাষা-শহিদ রফিক-বরকতদের স্মরণ করা হল পরম শ্রদ্ধায়। ১৯৬১ সালে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দেওয়া কাছাড়ের একাদশ শহিদের বেদিতেই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয় একুশের শহিদদের উদ্দেশে। শিলচর স্টেশন প্রাঙ্গণে যৌথভাবে বহুভাষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও ভাষা শহিদ স্টেশন স্মরণ সমিতি। সেখানে ডিমাসা, মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও বড়ো জনগোষ্ঠীর শিল্পীরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিলচর বঙ্গভবনে, গাঁধীবাগে তো বটেই, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতেও নানা অনুষ্ঠান ও আলোচনায় স্মরণ করা হল ভাষা শহিদদের। অন্য দিকে ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্তে আখাউড়া চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বেদির আদলে নির্মিত বেদি মঙ্গলবার ঢেকে যায় ফুলে ফুলে। এই বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ত্রিপুরার তথ্য সংস্কৃতিমন্ত্রী অনিল সরকার, বিধায়ক পবিত্র কর-সহ অসংখ্য বাংলা ভাষা অনুরাগী। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী। দু’দেশের নাগরিকদের উপস্থিতিতে একুশের অনুষ্ঠানটি অন্য তাৎপর্য পায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.