সল্টলেকে জমি বণ্টন সংক্রান্ত দু’টি মামলা। দু’টিতেই অভিযোগ রাজ্য সরকারের দিকে। দুই ক্ষেত্রেই অভিযোগ হল, রাজ্য সরকার টাকা নিয়েছে, কিন্তু জমি দেয়নি। একটিতে আবেদনকারীর অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাঁর কেনা জমি প্রতিবেশী এক রাজ্যকে দিয়ে দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলায় রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে কবে, কোথায় তারা আবেদনকারীকে বিকল্প জমি দেবে, তা জানাতে বলেছে।
অন্য মামলাটিতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি কেনার পরে জমির প্রাপক মিউটেশনও করেছেন। অথচ, তাঁকে রাজ্য সরকার পরে জানিয়েছে, ১০ কাঠা ওই জমি বাতিল করা হল। বদলে তাঁদের পাঁচ কাঠা জমি দেওয়া যেতে পারে।
১৯৭৪ সালে দীপক মিত্র নামে এক ব্যক্তি সল্টলেকে সিই ব্লকে ১০ কাঠা জমি পান। তাঁর জমি সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচিল তুলে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জমির দখল না-পাওয়ায় বারবার সরকারের কাছে দরবার করতে থাকেন। হঠাৎ ১৯৭৮ সালে দেখা যায়, রাজ্য সরকার ওই জমি অরুণাচল প্রদেশ সরকারকে দিয়ে দিয়েছে। দীপকবাবু সরকারের কাছে আবেদন করে বলেন, সিই ২০৪ নম্বর জমির মালিক তিনি। তিনি টাকা দিয়েছেন। সরকারের দেওয়া অনুমোদনপত্র রয়েছে। কিন্তু পরে বলা হচ্ছে, তাঁর জমির অনুমোদন খারিজ করে ওই জমি অরুণাচল প্রদেশকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনও জবাব পাননি। দীপকবাবু এর আগে তিন বার কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশও পেয়েছেন। কিন্তু জমি পাননি। তিনি আবার মামলা করে সমগ্র বিষয়টি জানান। বিচারপতি সৌমিত্র পাল স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার শুনানির সময়ে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতরকে বিচারপতি জানিয়ে দেন, যে হেতু অন্য রাজ্যকে ওই জমি দেওয়া হয়েছে, তাই আদালত ওই জমিটিই দীপকবাবুকে দিতে বলছে না। তবে সল্টলেকের অন্যত্র দীপকবাবুকে ১০ কাঠা জমি দিতে হবে। কবে, কোথায় তারা জমি দেবে, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে। নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে কয়েকটি জমি দেখেছে।
দ্বিতীয় মামলাটি করেন শৈবাল দত্ত নামে এক ব্যক্তি। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে নগরোন্নয়ন দফতর তাঁর বাবাকে শিল্প স্থাপনের জন্য ১০ কাঠা জমি দেয়। শৈবালবাবুর বাবা জমির দাম জমা দিয়ে দেন। পরবর্তীকালে জমির দর কিছু বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত টাকাও তিনি জমা দেন। জমি দেওয়া হয় ১৯৮০ সালে। শৈবালবাবুর বাবা জমি পাওয়ার আগেই মারা যান। কেটে যায় ১০ বছর। বাবা মারা যাওয়ার পরে শৈবালবাবুরা পুনরায় মিউটেশন করেন। ২০০৯ সালে হঠাৎ সরকার জানায়, শৈবালবাবুদের জমি খারিজ করা হল। বদলে তাঁদের পাঁচ কাঠা জমি দেওয়া যেতে পারে।
শৈবালবাবুরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত সরকারকে আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের কথা বলেন। সরকার হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও নীরব থাকে। গত মার্চে তৎকালীন রাজ্য সরকারের আইনজীবী শোভনলাল হাজরা রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে বলেন। তিনি বলেন, আদালত রাজ্য সরকারকে ভুল সংশোধন করার সুযোগ যখন দিয়েছে, তা মান্য করা উচিত। এর পরে নগরোন্নয়ন দফতর আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয়, ওই জমি নবদিগন্ত-কে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁদের ওই জমি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তাঁরা চাইলে কল্যাণীতে জমি দেওয়া যেতে পারে। আগে হাইকোর্ট জমির স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ওই জমি নবদিগন্ত-কে দেওয়ার ফলে আদালত অবমাননার প্রশ্ন উঠল। আদালত অবমাননার মামলা চলছে। এই মামলার সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার কোনও বেআইনি কাজকে সমর্থন করবে না। |