এত দিন চলছিল ‘এক জানলা’ ব্যবস্থা। সম্পত্তি মিউটেশনের ক্ষেত্রে এ বার ‘ওয়ান সিটিং’ ব্যবস্থা চালু করছে কলকাতা পুরসভা। সোমবার মেয়র পারিষদ (কর আদায়) দেবব্রত মজুমদার এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নতুন ব্যবস্থায় সম্পত্তি মিউটেশনের জন্য যিনি আবেদন করবেন, তাঁকে এক বারই পুরসভায় যেতে হবে। আবেদনকারীর দেওয়া সমস্ত নথি পুরসভার অফিসারেরা তাঁরই সামনে বসে পরীক্ষা করবেন। সেখানে সে দিনই আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে তাঁর মিউটেশন নথি কবে তৈরি হবে। এই ব্যবস্থা চালু হবে আগামী ১ মার্চ থেকে”
দেবব্রতবাবু জানান, নয়া ব্যবস্থায় আবেদনকারীর নথিপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় গ্রহণ করা না গেলে আরও যে সব নথি প্রয়োজন, আবেদনকারীকে লিখিত ভাবে তার তালিকা তৈরি করে দেবেন সংশ্লিষ্ট অফিসার। যাতে, নথি অসম্পূর্ণ থাকার দায় দিয়ে কারও মিউটেশন আটকে রাখা না যায়।
মেয়র পারিষদ জানান, ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট-বাড়ি-জমির মিউটেশন বকেয়া পড়ে আছে পুরসভার কাছে। বহু দিন আগে মিউটেশনের আবেদন করা সত্ত্বেও অনেকেই আবেদনের হালহকিকত সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিউটেশন দেওয়া হয়েছে, নাকি কোনও তথ্য-প্রমাণের অভাবে কাজটি অসম্পূর্ণ পড়ে আছে, জানা যাচ্ছে না কিছুই। দেবব্রতবাবু জানান, শুধু এই বোর্ডের আমলেই নয়, আগের বোর্ডের আমল ধরে বকেয়া মিউটেশনের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। বর্তমান বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে দফতরটি ছিল মেয়রের হাতে। সম্প্রতি তাঁকে ওই দফতরের ভার দেওয়ার পরেই তিনি খোঁজ নিয়ে ওই সব তথ্য জেনেছেন বলে দাবি করেন দেবব্রতবাবু। সমস্ত বকেয়া মিউটেশনের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যেই শেষ করতে বলা হয়েছে দফতরকে।
পুর-অফিসারেরা জানান, যাঁরা নতুন ফ্ল্যাট, বাড়ি বা জমির মিউটেশন করতে আসেন, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে। তার পরেও নথি চেয়ে পাঠানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। সব নথি পাওয়ার পরেও দফতরের গড়িমসিতে বকেয়া মিউটেশনের পরিমাণ কয়েক হাজারে পৌঁছেছে। অথচ, ওই সব সম্পত্তির মিউটেশন সময়মতো হলে পুরসভার আয় বছরে বেশ কয়েক কোটি টাকা বাড়তে পারে। এক অফিসার জানান, এমনও ঘটনা আছে যে, কাউকে মিউটেশন সার্টিফিকেট দিয়েছে পুরসভা। তার পরে তাঁকে না জানিয়েই তাঁর মিউটেশন বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিকের কাছে আর করের বিল পৌঁছয় না। স্বভাবতই তিনিও পুর-কর মেটাতে পারেন না। আবার যিনি তাঁর সম্পত্তির মিউটেশন সার্টিফিকেট পেয়ে গিয়েছেন এবং পরবর্তীকালে পুরসভা তাঁকে না জানিয়েই তা বাতিল করেছেন, সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া, সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন সেই ব্যক্তি।
পুর-অফিসারেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী মিউটেশনের আবেদনের ক্ষেত্রে সব নথিপত্র খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তাঁর, যিনি সেই আবেদন গ্রহণ করছেন। কিন্তু বর্তমানে সেই ব্যবস্থা প্রায় অচল। ফলে দু’একটি নথির অভাবে প্রচুর মিউটেশন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
আগের তৃণমূল বোর্ডে সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন এক দিনে মিউটেশন ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি দায়িত্ব থেকে সরতেই সেই ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। |