রাজাবাজারের বাস ডিপোয় তাণ্ডবের জেরে মঙ্গলবার ৭টি রুটের বাস বন্ধ হয়ে গেল। বিপাকে পড়লেন কলকাতা, হাওড়া-সহ উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির বহু যাত্রী।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রাজাবাজারের পাটোয়ারবাগানের বাসিন্দা মহম্মদ আকিল (৫০) ডিপোর সামনেই একটি সরকারি বাসের ধাক্কায় মারা যান। তাঁকে ধাক্কা মেরে বাস ডিপোয় ঢুকে যায়। পিছনে ধাওয়া করে এলাকার একদল যুবক ঢুকে পড়ে ডিপোয়। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, পুলিশ পৌঁছনোর আগেই তারা ডিপোয় তাণ্ডব চালায়। ৪৬টি বাস, ১১টি গাড়ি, দু’টি ট্রাম ভাঙা হয় বলে পরিবহণ-কর্তারা জানিয়েছেন। যুবকেরা ডিপোর ভিতরে দু’টি পেট্রোল পাম্প ভেঙে আগুন লাগানোরও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় গোলমাল ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় চুরির অভিযোগও দায়ের হয়েছে। |
ভাঙচুর হওয়া বাসের সারি। মঙ্গলবার, রাজাবাজারে। — নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “ভাঙচুরের এই ঘটনায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে। একেই আমরা বেতন দিতে পারছি না। তার পরে এত বড় ক্ষতি হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ল।” বাসচালকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা এড়াতে হবে। তবে, ভাঙচুরের মতো ঘটনাও বরদাস্ত করা হবে না।”
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিপোটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সর্বত্র কাচ, ইটের টুকরো ছড়িয়ে। অফিসে চেয়ার-টেবিল ভাঙা, কর্মীদের বসার জায়গা নেই। বাস ও অন্য গাড়িগুলি ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে কম্পিউটার-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই যুবকেরা ডিপোয় ঢুকেই হাতের সামনে যা পায়, তা দিয়ে বাসগুলি ভাঙতে শুরু করে। পরিবহণকর্মীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। ডিপোর বাইরে একদল বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। অন্য দলটি লাঠি, রড নিয়ে ভাঙচুর চালাতে থাকে। কম্পিউটার রুম, অফিস, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রাফিক দফতরে ভাঙচুর চলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পরিবহণকর্মী সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডিপোর মধ্যে দু’টি পেট্রোল পাম্প ছিল। সেগুলির তালা ভেঙে ফেললেও বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে রাখায় ওরা জ্বালানি বার করতে পারেনি। ফলে বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।” পরিবহণকর্মীরা জানান, পেট্রোল ঢেলে একটি নতুন বাসও জ্বালানোর চেষ্টা করে জনতা। আতঙ্কিত পরিবহণকর্মীরা পরে আর তাদের বাধা দিতে চেষ্টা করেননি।
জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় পুলিশ। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকায় উত্তেজনা ছিল বলে স্থানীয়েরা জানান। এ দিন সকালে ফের স্থানীয় বাসিন্দারা ডিপোর সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকায় আর গোলমাল হয়নি।
সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ডিপো থেকে বাস ঢোকা-বেরোনোর পথে কোনও ট্রাফিক-কর্মী থাকেন না। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশকে বারংবার বলা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
রাজাবাজার ডিপো থেকে হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনার জাঙ্গিপাড়া, আমতা, ধূলাগড়, বাগনান, ঘটকপুকুর, মালঞ্চ-সহ মোট ৭টি রুটে বাস চলে। এ দিন কোনও বাসই ওই ডিপো থেকে না ছাড়ায় সে সব এলাকায় নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে কলকাতায় অফিসে আসতে পারেননি। অনেকে দেরিতে অফিসে এসেছেন।
কবে ওই ডিপো থেকে ফের বাস চালু করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে পরিবহণ দফতর বা সিটিসি সদুত্তর দিতে পারেনি। সিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন সান্যাল বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফের বাস চালু করার চেষ্টা চলছে।” এ দিন দুপুরে সিটিসি-র চেয়ারম্যানকে নিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের বাড়িতে যান পরিবহণমন্ত্রী। শান্তিলালবাবু বলেন, “দলীয় তহবিল থেকে ওই পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকা দেন মন্ত্রী। বাড়ির কাউকে কাজ দেওয়া যায় কি না খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দেওয়া হয়।” এর পরে তাঁরা ডিপো পরিদর্শন করেন।
এ দিকে, এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ও সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে কাজিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছে। জনরোষেই ভাঙচুর হয়েছে দাবি করেও পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “সিটুর চক্রান্ত সফল হবে না।” সিটু-র পাল্টা দাবি, ট্রামকর্মীদের চাকরির স্থায়ীকরণ বাম আমলেই হয়েছিল। কেন তাঁরা নিজেদের রুজি-রোজগার বন্ধ করতে ভাঙচুর চালাবেন? |