দাবি বীরভূমের বাসিন্দাদের
জয়দেবের ডাকটিকিট মিলুক সব ডাকঘরেই
কে বলে ডাকটিকিটের চল নেই?
এই এসএমএসের যুগে চিঠি লেখার জন্য না হোক, সংরক্ষণের জন্য ডাকটিকিটের আকর্ষণ যে আজও অটুট, তার প্রমাণ দিচ্ছে কেঁদুলি বা কেন্দুবিল্লু। কেঁদুলির কবি জয়দেব ও তাঁর রচিত দশাবতারের বর্ণনার প্রতিরূপে প্রকাশিত হয়েছে পাঁচ টাকার ডাকটিকিট। ওই ডাকটিকিটের কথা জানাজানি হতেই শুধু বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন কবি-ভক্ত থেকে শুরু করে জাকটিকিট সংগ্রাহক। তালিকায় রয়েছেন অনেক সাধারণ মানুষও।
তবে সমস্যা হল, এই ডাকটিকিট প্রকাশ নিয়ে কার্যত কোনও প্রচার করেনি ডাক বিভাগ। এর প্রকাশ হয়েছে প্রায় নিঃশব্দে এবং শান্তিনিকেতন ছাড়া জেলার আর কোনও ডাকঘরে ওই টিকিট পাওয়াও যাচ্ছে না। এমনকী স্বয়ং কবি জয়দেবের গ্রামেও ডাকটিকিটটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘জয়দেব সংস্কৃতি পরিষদ’-এর কর্মকর্তা ও সদস্যেরা। সংস্কৃতি কর্মী আনারুল হক, শান্তি রজকদের কথায়, “কবে ডাক টিকিট প্রকাশ হল জানতে পারলাম না।” ওই সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি স্কুলশিক্ষক রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক বার শান্তিনিকেতন গিয়ে হঠাৎ সেখানকার ডাকঘরের পাশে ১১টি টিকিটের বিশাল হোর্ডিং চোখে পড়ে। তখনই সেখানকার ডাকঘর থেকে ৫৫ টাকা দামের এক পাতার টিকিট কয়েকটা কিনি।” রণজিৎবাবুর মতোই আরও অনেকে শান্তিনিকেতন ডাকঘর থেকে সুন্দর ওই ডাকটিকিটটি সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
সেই ডাকটিকিট। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
শান্তিনিকেতন ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার সেখ আব্দুল মোমিন জানান, মাস ছয়েক আগে ডাক বিভাগের কলকাতা কার্যালয় থেকে ৫৫ টাকা দামের ১১টি ডাকটিকিটের পাতা পাঠানো হয়েছে এই ডাকঘরে। তা খুব বিক্রিও হচ্ছে। এর পরে কয়েক দিন আগে ওই ডাকঘরের পাশে বড় একটা হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। ওই ১১টি ডাকটিকিট হল কবি জয়দেবের পুথি লেখা অবস্থায় মৎস্য, কচ্ছপ, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধদেব ও কল্কি।
‘জয়দেব সংস্কৃতি পরিষদ’ অন্যতম কর্ণধার সুভাষ কবিরাজ বলেন, “কবি জয়দেবের স্মৃতিতে একটি ডাকটিকিট প্রকাশের জন্য ডাকবিভাগকে আবেদন করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। বছর চারেক আগে ডাকবিভাগের দিল্লি ও কলকাতা অফিস থেকে কিছু আধিকারিক জয়দেব-কেঁদুলিতে আসেন। তাঁরা জয়দেবের টেরাকোটার রাধবিনোদ মন্দির ঘুরে দেখেন। ছবিও তোলেন। পাশাপাশি সুভাষ কবিরাজের সঙ্গে দেখা করে কবি জয়দেবের শ্রী শ্রী গীতগোবিন্দমের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থটি নিয়ে যান ওই আধিকারিকেরা।” সুভাষবাবু জানান, তার পর আর কোন উত্তর আসেনি। হঠাৎই জানা যায় ওই ডাকটিকিটের কথা। পরিষদের আবেদন, অন্তত বীরভূমের সব ডাকঘরে যেন ওই সব টিকিট পাওয়া যায়।
চিঠি লেখার পাট যখন কার্যত চুকেই গিয়েছে, তখন এটা কি বাজার ধরার বিশেষ কোনও কৌশল? ডাক বিভাগের কলকাতা কার্যালয়ের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, “মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন মনীষীর ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষেও বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে। আসলে এই ধরনের ডাকটিকিটের চাহিদা রয়েছে। অনেকেই এগুলি কেনেন নিজেদের সংগ্রহে রাখার জন্য। বিশেষ বিশেষ এলাকার নামকরা ব্যক্তিত্বদের নিয়েও ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। কেঁদুলি আর কবি জয়দেব সমার্থক বলে এ ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে।”
সার কথাটা অবশ্য বলেছেন বীরভূমেরই এক অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার। যাঁর মন্তব্য, “জয়দেবের ডাকটিকিটের চাহিদা দেখে একটা কথাই মনে হচ্ছে। এই ফেসবুক, টুইটার, এসএমএসের প্রজন্মেও ‘হায় ডাক তোমার গিয়াছে’ বলার সময় বোধহয় আসেনি!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.