ট্রেন থেকে চার কিশোর-কিশোরীকে উদ্ধার করল আরপিএফ। সোমবার সন্ধ্যায় কাটোয়া স্টেশনের ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে চার জনকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অভিভাবকেরা।
আরপিএফ সূত্রে খবর, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ তাদের দুই কর্মী কাটোয়া স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পাহারা দিচ্ছিলেন। সেই সময়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা আজিমগঞ্জ-কাটোয়া ট্রেনের কয়েক জন যাত্রী তাঁদের জানান, এক কিশোরী প্ল্যাটফর্মে বসে কান্নাকাটি করছে। আরপিএফ কর্মীরা ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে, ট্রেনে বসে রয়েছে আরও তিন জন। চার জনকে উদ্ধার করে আরপিএফ নিজেদের অফিসে নিয়ে যায়।
আরপিএফ জানায়, উদ্ধার হওয়া চার জনের মধ্যে তিন জন কিশোরী, অন্য জন কিশোর। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, সকলেরই বাড়ি মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থানার মুকুন্দবাগ পঞ্চায়েতের মুড়োমাড়া গ্রামে। তিন জন মুকুন্দবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। আর এক জন মুকুন্দবাগ প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আরপিএফ-কে তিন কিশোরী জানিয়েছে, সোমবার মুড়োমাড়া গ্রামের বাগানপাড়ায় শাক তুলছিল তারা। সেই সময়ে সেখানে হাজির হয় কালো আলখাল্লা পরা এক ব্যক্তি। সে তাদের জিজ্ঞাসা করে, তার সঙ্গে মেলা দেখতে যাবে কি না। এক কিশোরী বলে, “আমরা রাজি হতেই ওই লোকটি মুখে মাখার জন্য একটি ক্রিম দেয়। তা মাখার পরে আর কিছু মনে নেই।” অন্য দিকে, উদ্ধার হওয়া কিশোর বলে, “লালবাগ স্টেশনে আমাকে ক্রিম মাখতে দেয় আলখাল্লা পরা ওই ব্যক্তি। তার পরে আমাদের ট্রেনে তুলে দিয়ে নেমে যায়।” কাটোয়া স্টেশনে ট্রেন থামার পরে ঘোর কাটে এক কিশোরীর। ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে চোখে-মুখে জল দেওয়ার পরে চিৎকার শুরু করে সে।
ওই ট্রেনের যাত্রী রমানন্দ সাহা, বিকাশ বিশ্বাসেরা বলেন, “আমাদের সঙ্গেই বসেছিল ওই চার জন। ওদের হাবভাব আমাদের ভাল লাগেনি। কাটোয়া স্টেশনে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে দু’জন যাত্রী আরপিএফ-কে খবর দেন।” উদ্ধার হওয়া চার জনের থেকে ঠিকানা জেনে স্টেশন থেকেই তাদের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। সোমবার গভীর রাতে কাটোয়ায় পৌঁছন তাদের অভিভাবকেরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কাশেম শেখ।
মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া স্টেশনের আরপিএফ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ওই অভিভাবকেরা জানান, সোমবার শিবরাত্রি উপলক্ষে স্কুল ছুটি ছিল। সে দিনই গ্রামের এক জন মারা গিয়েছিলেন। দুপুরে মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য গ্রামের বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন। সেই সুযোগেই মেলা দেখানোর নাম করে কেউ চার জনকে নিয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, বিক্রি করার উদ্দেশেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁদের ছেলে-মেয়েদের। কাশেম শেখ বলেন, “পঞ্চায়েতের তরফে এ ব্যাপারে গ্রামবাসীকে সচেতন করার উদ্যোগ হবে।” আরপিএফের কাটোয়া পোস্টের ইনস্পেক্টর সমরেশ রায় বলেন, “উদ্ধার হওয়া চার জনের বিবরণ অনুযায়ী আলখাল্লা পরা ওই ব্যক্তিকে খোঁজা হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি।” |