অতি ছোটখাটো ব্যাপার
৯৬৫ সালের মেলবোর্ন কাপ কার্নিভাল। চার দিক উৎসবমুখর, রঙের মেলা। হাওয়ায় হাওয়ায় সাজগোজ। কে নেই সেখানে, দেশ-বিদেশের ঝাঁ-চকচকে’রা সব্বাই। ক্যামেরা ক্লিক ক্লিক করতে করতে দর্শকের আসনে ধরল ব্রিটিশ সুপারমডেল জিন শ্রিম্প্টনকে। কিন্তু ও মা! জিন কী পরে রয়েছেন? একটা সাদা ফ্রক-এর মতো, যা শেষ হয়ে গিয়েছে হাঁটুর বেশ কিছুটা ওপরে। সঙ্গে নেই কোনও স্টকিং, না হ্যাট, গ্লাভ্স, হাতে আবার একটা ছেলেদের ঘড়ি, এ কী সাজ? আশপাশের সম্ভ্রান্ত গোঁড়া সমাজ রে রে করে উঠল।
সারা পৃথিবী দেখল সে ছবি। ছবিটা ভাল করে চিনেও নিল। এক পা দু’পা করে ইতিহাসে ঢুকে গেল মিনি-স্কার্ট। সেই পোশাক, যা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই এ পাড় ও পাড় মহা-তোলপাড়। অ্যাদ্দিন শোনা যেত, ‘আর কত নীচে নামবে বাবা?’, এ বার বলল, ‘আর কত ওপরে উঠবে মা, এর পর তো...’, প্রফেশনাল রামগরুড়’রা আবার সুচিন্তিত মত দিল, ‘ওই, ওই জন্যই তো ধর্ষণ, সিম্পল মাধ্যাকর্ষণ’, মুখে যা এল তাই। কিন্তু মিনি-স্কার্ট তো তদ্দিনে হিসেব পাল্টানো টিন-এজার। তোয়াক্কা করতে বয়েই গিয়েছে।
ভিক্টোরীয় সময় থেকেই মেয়েদের ‘নরম’, ‘পলকা’ ভাবা হয়েছে, অতএব চাই সাহারা। পোশাকের দিক থেকে সে সাপোর্ট এত দিন দিয়ে এসেছিল করসেট। শিরদাঁড়া এক্কবারে স্ট্রেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মূলত ষাটের দশকে ছেলে-মেয়ে’রা চোয়াল তুলে ঘোষণা করল, ফালতু নাক গলাতে এসো না, আছি আমরা হাত-পা ছড়িয়ে, নিজেদের মতো, দিব্যি আছি। মেয়েরা বলল, আমাদের আর নিজের সাজ কই, মা’রা যা পরছে, পরাচ্ছে, তা নিয়েই চলছি-ফিরছি। অতএব বিচ্ছেদ, ফেলতে হবে নতুন ছাপ। তোড়জোড়ে শামিল মিনি-স্কার্ট। এ বার থেকে যে যেমন ইচ্ছে, যতটা ইচ্ছে পা ছড়াতে পারবে। ফেমিনিস্ট আইকন জার্মেন গ্রিয়ার, গ্লোরিয়া স্টাইনেম-ও এই স্কার্ট-এর মধ্যে দেখলেন সিলিং তুবড়ে দেওয়ার সাহস। বললেন নারীত্ব এই ভাবেও ফুটে ওঠে। আগুন আরও কিছু ঝিকিয়ে উঠল।
আগুনের সোর্স খুঁজতে গেলে অবশ্য চলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী ইউরোপ বা এমনকী প্রাচীন মিশর-এ। হ্যাঁ, ওই সময়কার মহিলা’রাও অনেকটা এমন ধাঁচের পোশাক পরতেন। তবে এই মডার্ন আমলের স্কার্ট-এ প্রাণ আনেন ইংল্যান্ড-এর মেরি কোয়ান্ট এবং ফ্রান্স-এর আন্দ্রে ক্যুরেজে। ওই ষাটের দশকের শুরুর দিক থেকে ওঁরা নিজ নিজ স্টোর-এ এই স্কার্ট বিক্রি করতে লাগলেন। মেরি পরে বলেছেন, আমি শুধু তালে তাল মিলিয়েছি, ব্যস। যা করার করেছে অফিস দৌড়নো মেয়েরা। রানিং-এ বাস ধরার দৃঢ়তা ও ক্ষিপ্রতা মিনি-স্কার্ট-ই জুগিয়েছিল যে। উৎসাহ তাঁদের কাছ থেকেই পাওয়া! শুধু মেরি নামটা রেখেছিলেন তাঁর প্রিয় গাড়ির ব্র্যান্ড মিনি’র কথা ভেবে।
মজার কথা হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই বাজারে কাপড় কমতি পড়ায় স্কার্ট-এর লেন্থ দিনকে দিন কমছিল। কিন্তু কখনওই হাঁটুর সীমা ছাড়ায়নি। কারণ তখন মনে করা হত, হাঁটু শরীরকে স্থিতি দেয়, পাওয়ার দেয়, তাকে অমন খোলা ছাড়া যায়? এখন অবশ্য ফেমিনিন পাওয়ার-এর উৎস ধরা হয়ে থাকে আরও বেশ খানিকটা ওপরে। তাই মিনি স্কার্ট সেই কাজই তো রমরমিয়ে করছে। সত্যি অকাট্য যুক্তি।
বিদেশে মিনি এখন সর্বত্র। ফরমাল, অফিশিয়াল, আর পার্টি-পার্বণে এসেনশিয়াল। কিন্তু আমরা? মার্কামারা অপরিণত। মিনি স্কার্ট দেখলেই ঝুঁকে পড়ে ভাল করে জুতোর ফিতে বাঁধতে যাই। আসলে আমরা তো কখনওই নিজের শরীর নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি। নিজের এতটা আপন একটা জিনিস নিয়ে কেন এই আড়ষ্ট ভাব, কে জানে? কিন্তু আবার পরা’ও চাই। অতএব মাঝেমাঝেই হাত দিয়ে টেনে নামিয়ে নেওয়া শুরু। আমরা সেই ছোটই থেকে গেলাম না?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.