বিধানসভার অধিবেশন ছাড়া অন্য সময়ে বিধানসভার ভিতরে বা মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করা যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করল সরকার পক্ষ। বিধানসভার সচিবের তরফ থেকে শুক্রবার ওই সংক্রান্ত নির্দেশিকা সব পরিষদীয় দলের নেতৃত্বকেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিবেশন চলাকালীন বা অন্য সময় বিধানসভা চত্বরে সচরাচর যে হেতু সাংবাদিক সম্মেলন করে থাকে বিরোধী পক্ষই, তাই এমন নির্দেশিকার লক্ষ্য আসলে বিরোধীরাই এমনই মনে করছে বিরোধী শিবির। এমন নির্দেশিকাকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক ঝোঁক’ বলেই অভিহিত করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। নির্দেশিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার স্পিকারকে চিঠি পাঠাচ্ছেন তিনি।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, বিরোধী দলনেতার ‘কণ্ঠরোধ’ করার জন্য কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। বিধানসভার নিয়মকানুন মেনে সব দলের জন্যই একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “বিরোধী দলনেতার চিঠিতে কী মনোভাব থাকে, তা দেখে আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের পরিস্থিতি থাকলে এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা সাপেক্ষে এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার কথা ভাবা যেতে পারে।” তবে এমন নির্দেশ দেওয়া যে পুরোপুরিই তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত, স্পষ্ট ভাবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্পিকার। |
বিরোধী দলনেতারই বৃহস্পতিবারের একটি সাংবাদিক সম্মেলনের উল্লেখ করা হয়েছে এ দিনের নির্দেশিকায়। প্রায়শই বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সঙ্গে বিধানসভার লাগোয়া রাস্তার ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কথা বলেন সূর্যবাবু। তাতে গাড়ির শব্দে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের রেকর্ড করার অসুবিধা হয় বলেই বিধানসভা ভবনের ভিতরে মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনের অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। তাঁকে বলা হয়, বিকাল সাড়ে ৪টে থেকে ৪টে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলন করা যাবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর মিলে সম্মেলন-পর্ব চলেছিল মোট ২৯ মিনিট। এর জেরেই এ দিনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ওই সাংবাদিক সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের পরেও ‘অনেক ক্ষণ’ চলেছিল। এর পর থেকে অধিবেশনের সময় ছাড়া আর কেউ মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন না।
নির্দেশিকার খবর পাওয়ার পরে এ দিন রাতে আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সূর্যবাবু বলেন, “সব পরিষদীয় দলকে পাঠালেও যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে, নির্দেশের লক্ষ্য বিরোধীরাই। সংসদীয় গণতন্ত্রে বলা হয়, ‘হাউজ বিলংস টু দ্য অপোজিশন’।
এই নির্দেশে শুধু আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারেই নয়, সংবাদমাধ্যমের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হল! কত ক্ষণ সাংবাদিক সম্মেলন চলবে, সেটাও কি সরকার নির্দেশ দিয়ে বলে দিতে পারে?” তবে সূর্যবাবুর বক্তব্য, বিধানসভার সরকারি কাজের সময়ের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন সারতে হবে, এমন কথা সরকার পক্ষ বলতে চাইলে তাঁরা মেনে নেবেন।
স্পিকার এবং রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র এ দিনের নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন তুলেছেন, বিধানসভা-বহির্ভূত বহু বিষয়ে বিধানসভার মিডিয়া সেন্টারে বসে কেন ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ জানাবেন বিরোধী দলনেতা? তার জন্য দলীয় দফতর আছে। সূর্যবাবুর জবাব, “বিরোধী দলনেতার দফতর তো বিধানসভাতেই! দলীয় কার্যালয় তো পরিষদীয় দফতর নয়। সরকার পক্ষের মন্ত্রী-বিধায়কেরা মহাকরণ বা অন্য সরকারি ভবনে বক্তব্য জানাতে পারেন, বিরোধী দলনেতা আর কোথায় যাবেন?” গুয়াহাটিতে বসে নির্দেশিকার কথা জেনে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব বলেছেন, “বিধানসভা এবং ওই চত্বরের অভিভাবক স্পিকারই। তাঁর নির্দেশের উপরে এখনই মন্তব্য করব না। কলকাতায় ফিরে পরিষদীয় দলের সঙ্গে আলোচনা করব।” পাশাপাশি, সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “সরকার ভয় পাচ্ছেন কীসে? মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আমাদের চুপ করে থাকতে। প্রায় চুপ করেই থাকি! মুখ্যমন্ত্রী এমন এমন কথা বলেন যে, মাঝেমধ্যে বলতেই হয়! এই ভাবে আমাদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না!” |