আজ লিগ দৌড়ে অস্তিত্বের লড়াই দুই প্রধানের
বাগানে অক্সিজেন
জোগানোর দায়িত্বে ‘ও টু’
ভৌতবিজ্ঞানে ‘ও টু’ মানে অক্সিজেন। মানুষকে জীবন দেয়।
‘ও থ্রি’ মানে ওজোন। মানুষের জীবন রক্ষা করে।
মোহনবাগানের ও টু এবং ও থ্রি কিন্তু একই লোক। ও টুওডাফা ওকোলি। ও থ্রিওডাফা ওনিয়েকা ওকোলি।
শনিবার নারকেল ফাটিয়ে, সিঁদুর লাগিয়ে নতুন টিম বাসে মোহনবাগান ফুটবলাররা রওনা হবেন যুবভারতী। সেই দলে একই সঙ্গে অক্সিজেন এবং ওজোন হলেন ওডাফা। লিগ দৌড়ে জীবন দায়ী, জীবন রক্ষাকারী অণু-পরমাণু।
হাঁটতে গেলে খোঁড়াচ্ছেন, ক্লাবে ভালবাসার নামই হয়ে গিয়েছে ‘ল্যাকপ্যাক সিং’। প্র্যাক্টিসের সময়ও লুকোনো যাচ্ছে না চোট। সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই সকালে বলছিলেন, “ডিফেন্ডাররা মেরে মেরে তো ওর পা ফুলিয়ে দিয়েছে।”
পায়ের ওই অবস্থায় মোহনবাগানের ‘ও টু’-র হাসি ফুরোয়নি। “কোচ বলে দিয়েছেন, কথা বললেই জরিমানা। চোট রয়েছে, কিন্তু এত প্লেয়ারের চোট, খেলতেই হবে” বলতে বলতে মুম্বই এফসি ম্যাচের আগের দিন মাঠ ছাড়ছিলেন ওডাফা। সামান্য দূরে, ক্লাব লনে বসে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার ড্যানিয়েল জেলেনি তাঁকে দেখে বলছিলেন, “ওডাফা ইচ্ছে করলেই আমাদের দেশে ‘এ লিগ’ খেলতে পারে। গোলের দিকে পিছন ফিরে বল ধরেই ও এমন টার্ন নেয়, যা অবিশ্বাস্য। বল পায়ে পড়লে ও অন্য রকম।”
সুব্রত ও তাঁর অক্সিজেন। কী দেখাচ্ছেন দু’জনে? গোলের রাস্তা? শুক্রবার প্র্যাক্টিসে। ছবি: উৎপল সরকার
ফালতু থেকে ও টু---অবিশ্বাস্য উত্তরণ দু’কোটির স্ট্রাইকারের।
মহমেডান তাড়িয়ে দিয়েছে তখন। সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে পিয়ারলেসে প্র্যাক্টিস করতেন ওডাফা। করুণাময়ীর ফুটপাথ থেকে কোচ মিহির বসু তাঁর জন্য মাঝেমাঝে নিয়ে যেতেন মোমো এবং স্যান্ডউইচ। তপসিয়া বা বেহালার ফ্ল্যাটে রুমমেটদের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতেন ওডাফা। কোচের কাছে মাঝেমাঝে টাকা নিতেন একশো-দুশো। ফুটপাথের মোমোকেই মনে হত অমৃত।
সেই হাসিটা একই রকম রয়ে গিয়েছে। শুধু ফুটবলার হিসেবে পরিবর্তন চোখ কচলে দেখতে হয়।
মহমেডানে খেলার সময় বহুদিন ওডাফা খেলতেন স্টপারে বা সাইডব্যাকে। ফরোয়ার্ড দীপেন্দু বিশ্বাস, চিডি। মাঝমাঠে নবি। ওই সময় ওডাফাকে দেখে তাঁর ক্লাব কোচ বলেছিলেন, “কী সব হাঁটুভাঙা প্লেয়ার ধরে এনেছে কর্তারা!” সেই নবি মোহনবাগানেও আজ ওডাফার সঙ্গী। ওডাফার প্রসঙ্গ তুললে অবাক গলা তাঁর, “আমার রুমমেট ছিল। খেপ খেলে খেলে প্লেয়ার যে কত উন্নতি করতে পারে, তা ওডাফাকে না দেখলে জানতাম না।” তাঁর কথার সমর্থন দীপেন্দু বিশ্বাসের গলাতেও। ওডাফা যাঁকে দেখলে এখনও সম্বোধন করেন, “বেস্ট ইন্ডিয়ান ফরোয়ার্ড”।
‘ও টু’ নামটা কি ওডাফার ক্ষেত্রে মানিয়ে যায়? ব্যারেটো, হাদসন, নবি, সুনীলরা যখন কেউ নেই, তখন অক্সিজেন তো ওডাফা হবেনই। সুব্রত ভট্টাচার্য এখন বিশেষ একজনের নাম করতে নারাজ। কিন্তু ওডাফার বডি কভারেজ, দু’পায়ের ইনসাইড-আউটসাইড ডজ, শুটিংয়ের প্রশংসায় অকাতর। “ছেলেটা খুব ভাল। টিমস্পিরিটও দারুণ।” দ্বিধাহীন বলে দেন মোহন টিডি।
শুধু ওডাফা-মন্ত্র দিয়ে মুম্বই এফসি-কে সম্মোহিত করা যাবে কি না, প্রশ্নটা থাকছে। সুব্রতর লেফট ব্যাক পজিশনে তিনজনই (নবি, ধনরাজন, মোহনরাজ) চোটের কবলে। অ্যাকাডেমির ছেলে দীপককুমারকে সই করানো হল দ্রুত। ছটফটে নবি এ দিন ক্লাবে প্র্যাক্টিস না করতে পারলেও বিকেলে পাড়ার মাঠে নেমেছিলেন, যদি পারা যায়। নেমে দেখলেন, ব্যথা আছেই। টিডি সুব্রতরও তাই ব্যথা আছেই।
এগারো নম্বর টিম হলে কী হবে, মুম্বই এফসি কলকাতায় এসেছে চাঞ্চল্য ফেলে, চার্চিল-শিকার করে। জি টিভি-র দল হিসেবে শোরগোল ফেলে শুরু করে দলটা এখন প্রাগৈতিহাসিক আমলে পড়ে। মার্কেটিং নেই। মুম্বই নামটা সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও জনসমর্থন নেই। নোয়েল উইলসন, কুট্টিমণিরা না থাকায় নামী বলতে পড়ে আছেন অভিষেক যাদব। তিন নাইজিরিয়ান গায়েগতরে খেলেন। ফলে সাংবাদিকরা ছোটেন চতুর্থ বিদেশি, আফগানিস্তানের জোহেব ইসলাম আমিরির দিকে। যদি যুদ্ধবিধ্বস্ত কাবুল নিয়ে কোনও মানবিক দৃষ্টিকোণের স্টোরি করা যায়!
মানবিক দৃষ্টিকোণের স্টোরির জন্য মুম্বই এফসি-তে একটা নামই পড়ে। গাট্টাগোট্টা, বেঁটেখাটো এক তরুণ। মোহনবাগান মাঠে প্র্যাক্টিসে ঢোকার সময় চারদিকে তাকাচ্ছিলেন কৌতূহলী চোখে। পুরনো ঘর, পুরনো সংসারের সামনে লোকে যেমন তাকায় সবিস্ময়।
নেশার চক্করে পড়ে হারিয়ে যাওয়া পি সি লালমপুইয়া। চোটের জন্য আই লিগে এ বারও খেলা হয়নি। চার্চিল ম্যাচে প্রথম থেকে নেমেছিলেন। পুরনো দলের বিরুদ্ধে কি বাড়তি তাগিদ থাকবে? মাঠ থেকে বেরোনর সময় প্রশ্নটা শুনে লালম শুধু হাসেন। আগে যা করতেন।
দীর্ঘকায় ওডাফা যদি তপসিয়ার ঘুপচি নোংরা গলি থেকে সাউথ সিটির তেত্রিশ তলায় উত্তরণের চিহ্ন হন, খর্বকায় লালম তা হলে কলকাতার হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীর নজর থেকে মুম্বইয়ের একাকিত্বে হারিয়ে যাওয়া মুখ।
দলকে অক্সিজেন দেওয়ার তাগিদ মোহনবাগানের ও টু-রই বেশি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.