একটি কারখানায় ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তারাতলায় সংঘর্ষ বেধেছিল তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যেই। সেই সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে গুরুতর আহত পুলিশকর্মীর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শওকত আলি নামে তারাতলা থানার ওই কনস্টেবলের কপালের তিনটি হাড় ভেঙেছে। গুরুতর আঘাত লেগেছে খুলিতেও। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম শুক্রবার জানান, ওই ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কনস্টেবলকে হত্যার চেষ্টা এবং অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। দুষ্কৃতীদের ধরতে অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন জায়গায়। ধৃতদের শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সংঘর্ষ বেধেছিল কেন?
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই কারখানায় ৩৪ জন ঠিকা শ্রমিক কাজ করতেন। সম্প্রতি কারখানায় ঠিকাদার বদল হয়। নতুন ঠিকাদার ৩৪ জন শ্রমিককে বাতিল করে নতুন ১০ জন শ্রমিক নিয়োগ করেন। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর অভিযোগ, বন্দর এলাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতাদের সুপারিশেই বহিরাগত ১০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর অভিযোগ, কারখানাসংলগ্ন সাউথ কেবিন বস্তি (খালপাড়) এলাকার অনেকেই আগে ওই কারখানায় ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। তাঁদের না-নিয়ে কিছু দলীয় নেতার সুপারিশে বহিরাগতদের কাজ দিচ্ছেন নতুন ঠিকাদার।
এরই পরিণতিতে বৃহস্পতিবার সকালে ওই কারখানার গেটের সামনে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তা ছড়িয়ে পড়ে সাউথ কেবিন বস্তি এলাকাতেও। পুলিশ গেলে তাদের দিকে ইট ছোড়া হয়। কয়েক জন পুলিশকর্মীকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবলু করিম ও আনোয়ার খান। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়।
স্থানীয় বিধায়ক তথা পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম অবশ্য এই ঘটনার দায় চাপিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের উপরে। তাঁর কথায়, “সিপিএম-ই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হামলা চালিয়েছে। রাজেন্দ্র রাজভড় নামে এক সিটু নেতা দলবল নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করেছে। তার পরেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।” রাজেন্দ্রবাবুকে এখনও ধরা যায়নি।
ওই সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিটুর কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য খোকন মজুমদার। তিনি এ দিন বলেন, “রাজেন্দ্রবাবু ওই ঘটনায় জড়িত নন। শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে তৃণমূলের সমর্থকদের সঙ্গে বস্তিবাসীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দু’পক্ষই তৃণমূলের সমর্থক। নিজেদের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ধামাচাপা দিতে অযথা সিটুর নাম জড়ানো হচ্ছে।” |