তপনে চেক সমস্যা মিটল না
মালদহে কৃষি খামারই বেহাল, সঙ্কটে চাষিরা
কে ধানের দাম মিলছে না, তার উপরে হাতে টাকা না থাকায় এই মরসুমেও বোরো চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মালদহের চাষিরা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেচের জল ও উন্নত মানের বীজের অভাব। অথচ যারা এই বিপর্যয় থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারত, সেই রাষ্ট্রীয় কৃষি খামার বেহাল।
এ দিকে, খাদ্য দফতর আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ‘বাউন্স’ হওয়া চেকের সমস্যা মেটেনি। চালকলের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চাষিরা স্থানীয় বালাপুর গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ধান বিক্রির চেক নিয়ে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার আশিস সরকার বলেন, “ইতিমধ্যে ১১৭টি বাউন্স হওয়া চেক জমা পড়ে রয়েছে। তাই নতুন করে আর ওই চালকলের ইস্যু করা চেক জমা নেওয়া হচ্ছে না।” তবে যে চালকল থেকে চেকগুলি দেওয়া হয়েছিল সেটির মালিক আজ, শুক্রবার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
চাষে বিপর্যয়ের জেরে মালদহে ইতিমধ্যেই অন্তত দু’জন ধানচাষির আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। অর্থসঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে কম জল, সার, কীটনাশক লাগে এমন বীজ চাইছেন চাষিরা। কিন্তু যেখানে বীজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়ার কথা সেই কৃষি খামারের মোট ৩০ একর জমির মধ্যে ২৭ একর গত দু’বছর ধরে পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকি অংশে সামান্য চাষবাস হলেও গবেষণার উদ্যোগ নেই। ২২ জন কৃষি শ্রমিক কার্যত বসে রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদ-১ সরোজ সিংহ ও তাঁর দফতরের কর্মীরা পরস্পরকে দায়ী করছেন। কর্মীদের অভিযোগ, খামারের হাল ধরতে সরোজবাবুর উদ্যোগী হওয়া দরকার। কিন্তু তিনি মালদহেই থাকেন না। সরোজবাবুর পাল্টা দাবি, “আমি ধানের পাঁচটি নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করেছি, কিন্তু এখানে কী করে গবেষণা করব? আমি ছাড়া এখানে এক জনও গবেষক নেই। কাজ করার পরিকাঠামোও নেই।”
অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদের ব্যাখ্যা, জেলার খামারে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ইনকিউবেটর, জার্মিনেটর, দু’টি প্রজাতির ধানের ফুলের মিশ্রণ ঘটানোর যন্ত্র, ব্যালান্স, ওভেন, মিটার স্কেল, ড্রায়ার কিছুই না থাকায় গবেষণার কাজ করতে তাঁকে চুঁচুড়ায় যেতে হচ্ছে। মালদহের খামারে কোনও দিনই বীজ নিয়ে গবেষণা বা বীজ তৈরি হয়নি। কিন্তু চুঁচুড়ায় গবেষণা করেই তিনি মালদহে ব্যবহার্য কৌশল্যা ধানের প্রজাতি উদ্ভাবন করেছেন। সেই কারণেই নিয়মিত দফতরে থাকতে পারছেন না।
জেলার কৃষকেরা অবশ্য আধিকারিকের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাঁদের দাবি, এক সময়ে মালদহের রাষ্ট্রীয় কৃষি খামারের গোটা জমি সবুজ হয়ে থাকত। উন্নত মানের ধান, গম, সরষে, তিল, তিসি, ছোলা ও বিভিন্ন শস্যের বীজ উৎপাদন হত। গবেষণা হত পুরোদস্তুর। ১৯৯৯ সালে এই খামারেই গমের বি ডব্লিউ-১১ প্রজাতি উদ্ভাবিত হয়। কৃষকেরা খামারে গিয়ে গবেষকদের পরামর্শ নিতেন। সেখানে উৎপাদিত বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হত। পাশাপাশি, রাজ্য বীজ নিগমকেও তা দেওয়া হত। এখন সেই খামারের অফিস ঘরে ঢুকলে মনে হয় ‘ভূতবাংলো’। এই সুযোগে গত এক বছরে খামারে ১৩ বার চুরি হয়েছে। সরোজবাবু অবশ্য বলেন, “আমি দু’বছর হল এখানে এসেছি। আমি আসার আগে এক বছরে ১৩ বার চুরি হয়েছে। গুদামের ধান, গম থেকে শুরু করে বহু জিনিস চুরি গিয়েছে। আমি এসে খামারে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেছি।”
তপনের চেক সমস্যা প্রসঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী এ দিন বলেন, “চালকলের মালিকের বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল।” চালকলের মালিক বিজয় দে বলেন, “আজ আমাদের টাকা পেতেই বিকেল ৪টে বেজে যায়। ফলে তা আর ব্যাঙ্কে জমা দিতে পারিনি। শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে জমা দিয়ে দেব। শনিবার চাষিরা বালাপুর গ্রামীণ ব্যাঙ্কে চেক জমা দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.