হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক মাস বয়েসি পর্যন্ত অসুস্থ শিশুদের জন্য আত্মীয়রা বাইরে থেকে ওষুধ কিনলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার দাম মিটিয়ে দিতে হবে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে এসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দেন। প্রসূতি ও শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে তাঁরা কথা বলে জানতে পারেন, বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। তখন তাঁরা হাসপাতালের সুপারকে জানান, এক মাস বয়েসি অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা নিখরচায় করতে হবে। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হলে, সেই ওষুধের দাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই মেটাতে হবে। হাসপাতাল সুপার সুদীপ মণ্ডল পরে বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের আমরা সে কথা জানিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে তিন সদস্যের ওই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বোলপুর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। ওই প্রতিনিধি দলে আছেন জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের সহকারী কমিশনার শীলা দেব, অনুভব শ্রীবাস্তব এবং নারায়ণ কর। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বোলপুরের এসিএমওএইচ জয়ন্ত সুকুল। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তাঁরা প্রশংসা করেন। ওই প্রতিনিধি দল বুধবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেখানে তাঁদের কাছে ওই হাসপাতালের সুপার শিশু বিভাগের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান।
ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা হাসপাতালে যখন পৌঁছন, তখন লোডশেডিং চলছিল। জেনারেটরের আলোয় তাঁরা শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ-সহ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। রোগীদের সঙ্গে কথাও বলেন। হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি হালদার বলেন, “এখানে মাসে প্রায় ৯০০টি বাচ্চা প্রসব হয়। যে কোনও জেলা হাসপাতালের সমান এখানে প্রসব করানো হয়। অথচ, এখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা সে তুলনায় খুবই নগন্য। ফলে প্রসূতি মায়েদের যে ধরণের নজরে রাখা প্রয়োজন তা দেওয়া যায় না। এই সমস্যার কথা ওই প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি। তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের বিষয়টি জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষোভ, জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে ব্লক হাসপাতালগুলিতে যে ধরণের পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে, সে তুলনায় এই মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি। সুপার জানান, এই হাসপাতালের শিশু বিভাগের জন্য অনেক বছর আগে এক জন মাত্র চিকিৎসক ও ১০টি শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত আর নতুন করে বরাদ্দ হয়নি। তবে রোগীর চাপ থাকায় ৩০টি শয্যা করা হয়েছে। অন্য বিভাগ থেকে সাত জন নার্সকে শিশু বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। আরও বেশি শিশু চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা সুপারকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার উপরে নজর দিতে বলেছেন। সুপার বলেন, “হাসপাতালে সাফাই কর্মীরও অভাব রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবে উপযুক্ত পরিষ্কার রাখা যায় না।” |