সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা যাতে সময় মতো আউটডোরে আসেন, তা নিশ্চিত করতে ‘এসএমএস’ পদ্ধতি চালু করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, স্বাস্থ্য-কর্তারাই এখন তা মানছেন। স্বাস্থ্য-সচিব স্বয়ং ন্যাশনাল মেডিক্যালের আউটডোরে ‘রোগী সেজে’ বসে থেকে দেখেছেন, হাজিরা জানিয়ে যথারীতি ‘এসএমএস’ যাচ্ছে বটে, কিন্তু চিকিৎসকের দেখা মিলছে না!
‘ফাঁকিবাজ’ ডাক্তার ধরতে স্বাস্থ্যভবনের ‘এসএমএস-দাওয়াই’ এ ভাবে মাঠে মারা যাওয়ায় এ বার নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্থির হয়েছে, শুধু ডাক্তারদের হাসপাতালে আসার সময় নয়, তাঁরা কতক্ষণ আউটডোরে থাকছেন, তারও হিসেব নেওয়া হবে। এবং তাতে যদি দেখা যায় কোনও ডাক্তার নিয়মিত হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছেন, শাস্তি হিসেবে তাঁকে বদলি করা হবে। হিসেবটা কষা হবে কী ভাবে?
স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, আউটডোরে এক জন চিকিৎসকের কতক্ষণ থাকার কথা, আর তিনি কতক্ষণ থাকছেন, এই দুইয়ের ভিত্তিতে একটি সূচক (আউটডোর ইনভল্ভমেন্ট ইনডেক্স, সংক্ষেপে আইডিআই) তৈরি করেছেন দফতরের সমীক্ষকেরা। যে সব চিকিৎসকের আইডিআই একটা নির্দিষ্ট মানের কম, ধরে নেওয়া হবে হাসপাতালের কাজের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠাও কম। বদলি করা হবে তাঁদেরই। |
স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার বলেন, ২০১১-র ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২-র ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দু’বার রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের যে আইডিআই বানানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ১৫টি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আউটডোরে থাকার সময় ক্রমশ কমাচ্ছেন। যথেষ্ট সময় আউটডোরে থাকছেন গড়ে মাত্র ৪৪% ডাক্তার। শুধু তা-ই নয়, যে হাসপাতালে ডাক্তার যত বেশি, সেখানে আউটডোরের কাজে ডাক্তারদের আগ্রহও তত কম। এক সমীক্ষকের কথায়, “ সংখ্যা এক জন বাড়লে আউটডোরে ডাক্তারদের মনোনিবেশ গড়ে ৫% কমছে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন যে আউটডোরে বসতে হয়, সেই নিয়মটাই অনেকে ভুলে গিয়েছেন! সংখ্যা বাড়লেই ডাক্তারেরা নিজেদের মধ্যে আউটডোরের দিন ভাগ করে নিচ্ছেন।”
‘ফাঁকিবাজ’ চিকিৎসকদের বদলি করলেই কি সমস্যার সুরাহা হবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দাবি, “এতে কাজ হবে। কারণ, এক বার শাস্তিমূলক বদলি হলে এবং সেই তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক যথেষ্ট লজ্জিত হবেন। ভবিষ্যতে ফাঁকি দেওয়ার আগে দু’বার ভাববেন।” অর্থাৎ, ‘ফাঁকিবাজ’ ডাক্তারদের ‘লজ্জা দিয়ে’ তাঁদের কর্মমুখী করে তুলতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। যদিও স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, নতুন জায়গায় বদলি হয়ে ওই চিকিৎসক ফের ফাঁকি দিলে কী হবে, তার কোনও উল্লেখ এই পরিকল্পনায় নেই। তাই ‘এসএমএস’ পদ্ধতির মতো এটিও ব্যর্থ হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। |