|
|
|
|
জল নেই খালে, বন্ধ বীজ ছড়ানোর কাজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাজগঞ্জ |
শাখা ক্যানালে জল পৌঁছয়নি। তাই জলের অভাবে বোরো ধানের বীজ ছড়াতে পারছেন না চাষিরা। এই ঘটনায় জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের বোরো চাষিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে জল পাওয়া না গেলে চাষিরা একজোট হয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধের হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনায় কৃষি দফতর থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজগঞ্জ কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগঞ্জের করতোয়া ব্যারেজ ডিভিশন থেকে রাজগঞ্জের বিভিন্ন শাখা ক্যানেলগুলির মাধ্যমে জল ছাড়া ব্যবস্থা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর জল ছাড়া হয়েছিল। তাতে চাষিরা বোরো চাষের জন্য মানসিকভাবে তৈরিও হয়েছিলেন। কিন্তু শাখা ক্যানেলগুলিতে চাষের জমিতে জলই পৌঁছয়নি। ফলে কোনও চাষিই এখনও পর্যন্ত বোরো ধানের বিচনই ফেলতে পারেননি। বহুবার সেচ দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ কৃষি দফতরের। করতোয়া বারেজ ডিভিশনের এসডিও নির্মল লক্ষ্মেশ্বর অবশ্য জানিয়েছেন, ক্যানেলগুলিতে ঝোপঝাড় ও আবর্জনার ফলে সে ভাবে জল পৌঁচ্ছে না। আজ-কালের মধ্যে সেগুলি সাফাই করে জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে। এসডিও ওই কথা বললেও রাজগঞ্জের এডিও মধুসূদন রায় বলেন, “সেচ দফতরের চরম গাফিলতির জন্য জল ছাড়ার এতদিনেও জমিতে জল না পৌঁছয়নো চাষিরা এখনও জমিতে জল পায়নি। ফলে কেউ বিচনই ফেলতে পারেনি। আদৌ তাঁরা বোরো চাষে জল পাবেন কী না, তা নিয়ে চাষিরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এই নিয়ে বহুবার সেচ দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে। এক মাস পার হয়ে গেল। বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতর কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না। চাষিদের কোনও সমস্যাই সেচ দফতর বুঝতেই চাইছে না। চাষিরা প্রতিদিন আমাদের জ্বালাতন করছেন।” রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সত্যেন মন্ডল থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ কৃষকসভার নেতা মোক্তাল হোসেন, ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিসানসভার নেতা নারায়ণ বসাক, জলপাইগুড়ি জেলা কিসান কংগ্রেস নেতা দুলাল দেবনাথরা একই অভিযোগ করে বলেন, “কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন চাষিরা। সেচ দফতরের কর্তাদের মোবাইলে ফোন করলেও কেউ কথাই বলতে চাইছেন না। চাষিদের ক্ষোভ ধুমায়িত হচ্ছে।” বড় গোলমালের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে তাঁরা অনুমান করছেন।” রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও এই ঘটনায় ক্ষোভ করে বলেছেন, “চাষিরা আমার কাছেও জলের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বুধবারই এই নিয়ে সেচ দফতরে কড়া ভাষায় বলেছি চাষিরা জল পাবে কি না? আজ, বৃহস্পতিবারই সেচ দফতরের একটি টিম এলাকায় জলের পরিস্থিতি দেখতে আসবেন বলে জানিয়েছেন। দেখি কী হয়।” রাজগঞ্জে প্রায় পনের হাজার হেক্টরে বোরো চাষ হয়। গতবারেও সে ভাবে জল না মেলায় বহু চাষি বিচন ফেলতে ও রোপণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ। এ বার কৃষি দফতর থেকে এক হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড বোরো ধানের প্রদর্শনী ক্ষেত্র পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু কৃষি দফতরের আশঙ্কা ক্যানেলগুলি থেকে জল না মিললে তাঁদের ওই পরিকল্পনা সফল হবে না। কৃষি দফতরের আরও অভিযোগ, ৩১ ডিসেম্বর জল ছাড়লেও শাখাগুলিতে এক-দেড় ফুটের উপরে জল নেই। সেচ দফতর থেকে যে পাইপ লাইনগুলি করা হয়েছে, জলের স্তর থেকে ওই পাইপলাইনগুলি উপরে করায় পাইপলাইনগুলি দিয়ে জমিতে জল পৌঁছয় না। অপরিকল্পিতভাবে সেগুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষি দফতরের। ক্যানেলগুলিতে সেখানে-সেখানে ভেঙে গিয়েছে। সেগুলিও মেরামত না করে জল ছাড়া হয়েছে। রাজগঞ্জের শিকারপুর ও পানিকৌড়ি অঞ্চলের অসীম দাস, সুমন রায়, রাজেন রায়ের মতো চাষিরা বলেন, “মূলত বোরো চাষ করেই আমাদের বেশির ভাগ চাষিদের সংসার চলে। সেচ দফতর আমাদের সঙ্গে মসকরা শুরু করেছে। জল না মেলায় আমরা বিপাকে পড়েছি। প্রতি বছরের আমাদের জল নিয়ে ভুগতে হয়। এবারেও এখনও বিচনই ফেলতে পারিনি। বিচন ফেলা ও রোপণের সময়ও শেষের দিকে। বর্তমানে জল ছাড়লেও এই শেষ মুহুর্তে আমরা কী করব বুঝতেই পারছি না।” |
|
|
|
|
|