আবার ফিরে এসে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেছে শীত। এবং এমনই দাপটে যে, ফেব্রুয়ারিতেও শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গ!
সোমবার উত্তর ভারত থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া মধ্য ভারত হয়ে পূর্ব ভারতে ঢুকে পড়েছিল। তার জেরে গত দু’দিন বিহার-ঝাড়খণ্ডে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে নেমেছে। বৃহস্পতিবার যার প্রভাব দক্ষিণবঙ্গেও এসে পড়ল। এ দিন কলকাতা ও আশপাশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তুলনায় বেশি নেমেছে। দমদমে তো সেটা শৈত্যপ্রবাহের দোরগোড়ায় চলে এসেছিল! এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কি না এ সময়ের স্বাভাবিকের ৩ ডিগ্রি কম।
আর আজ, শুক্রবার তা আরও নামবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, “আজ, শুক্রবার কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা আরও কমবে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান শিল্পাঞ্চল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূমের কিছু অঞ্চলে আমরা শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছি। উত্তরবঙ্গেও জোর ঠান্ডা চলছে। তা আরও বাড়বে।”
উল্লেখ্য, ডিসেম্বর থেকে ধরলে চলতি মরসুমে মোট যে চার দফায় শীত পড়ল, তার মধ্যে তিন দফা পড়েছে জানুয়ারিতেই। তবে কোনওটাই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় দফায় কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছিল ১০ ডিগ্রিতে (১৫ জানুয়ারি)। সেটাই এ বার শীতের মরসুমে এখনও পর্যন্ত কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এই দফায় শীত ক’দিন থাকবে?
গোকুলবাবুর মন্তব্য, “শীত এখনই বিদায় নেবে না। আরও কিছু দিন থাকছে।” বস্তুত, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়াও এই মুহূর্তে শীতের অনুকূল বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। উপগ্রহ-চিত্রে বঙ্গোপসাগরে কোনও ঘূর্ণাবর্তের ইঙ্গিত নেই। মধ্য ভারত, গোটা উত্তর ও উত্তর-পূর্বের আকাশ পরিষ্কার। দেশের সমতলে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের মান্ডালায় ৩.৫ ডিগ্রি। সেখানেও তাপমাত্রা আরও নামবে বলে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস।
অন্য দিকে কনকনে হিমেল বাতাস মধ্য ও পূর্ব ভারতে সরে আসায় তামাম উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত গত ক’দিনের হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থেকে রেহাই পেয়েছে। যদিও মৌসম ভবনের মতে, এই স্বস্তি নেহাতই সাময়িক। কেন? |
এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, “পাকিস্তান থেকে আর একটা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ফের কাশ্মীরে ঢুকতে চলেছে। ফলে শুক্রবার থেকে কাশ্মীর-উত্তরাখণ্ড-হিমাচলের পাহাড়ে বরফ পড়বে। পঞ্জাব-হরিয়ানায় বৃষ্টি শুরু হবে। আর ঝঞ্ঝাটি উত্তর ভারত পেরিয়ে যাওয়ার পরে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত আবার শীতে কাঁপবে।” এর জেরে কি পশ্চিমবঙ্গে আর এক দফা শীত পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
আবহবিদেরা বলছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে কোন রাস্তা ধরবে, সব কিছু তার উপরে নির্ভর করছে। সাধারণত মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার পরে কখনও পশ্চিমী ঝঞ্ঝার তীব্রতা বেড়ে যায়, কখনও কমে যায়। কখনও তা নেমে আসে মধ্য ভারত হয়ে পূর্ব ভারতে, কখনও আবার মাঝপথেই বিলীন হয়ে যায়। আবহবিদেরা মনে করছেন, নতুন ঝঞ্ঝাটির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি আগামী দু’দিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এবং তখনই বোঝা যাবে, দক্ষিণবঙ্গে শীত এ বার পঞ্চম ইনিংস খেলবে কি না। |