আরও নথি উদ্ধার এবং আরও জেরা করার জন্য আইএএস অফিসার দেবাদিত্য চক্রবর্তী এবং অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার আর এম জামিরকে পুলিশি হাজতে রাখার আবেদন জানিয়েছিল সিআইডি। সেই আবেদন মঞ্জুর করে লোহাচুর দুর্নীতিতে ধৃত ওই দু’জনকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কাল, শনিবার তাঁদের ফের আদালতে হাজির করাতে হবে।
চিনে লোহাচুর সরবরাহের ব্যবসায় নেমে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা লগ্নি করেছিল রাজ্যের অধিগৃহীত সংস্থা অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগম বা এসিএসসি। তাতেই কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে সিআইডি বুধবার গ্রেফতার করে নিগমের সেই সময়ের দুই শীর্ষ কর্তা দেবাদিত্যবাবু ও জামিরকে। বৃহস্পতিবার বেলা ২টো নাগাদ ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলককুমার চৌধুরীর এজলাসে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবীরা বিচারককে জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়েছে। একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালে। অন্যটি ২০১১ সালে। দু’টি মামলাই আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত। ২০১১ সালে দায়ের করা মামলায় দেবাদিত্যবাবু ও জামিরকে তিন দিন পুলিশি হাজতে রাখার আবেদন জানান সরকারি আইনজীবীরা। তা মঞ্জুরও হয়। |
পরে সরকারি আইনজীবী বাসুদেব দত্ত জানান, ২০০৭ সালে দায়ের করা মামলায় জামিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। এ দিন সেই মামলায় আদালত জামিরের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। সরকারি আইনজীবীরা আদালতে জানান, দেবাদিত্যবাবু আইএএস অফিসার। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন দরকার। সেই অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। সম্প্রতি তা মিলেছে।
সিআইডি অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অন্য সরকারি আইনজীবী শিলাদিত্য সান্যাল জানান, দুর্নীতির মামলায় এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া জরুরি। ধৃতদের পুলিশি হাজতে না-নিলে তাঁরা প্রভাব বিস্তার করে নথিপত্র এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিতে পারেন। তা ছাড়া দেবাদিত্যবাবুকে এখনও ভাল ভাবে জেরাও করা হয়নি। সেই কারণেও তাঁকে পুলিশি হাজতে নেওয়া দরকার।
অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অমিত চক্রবর্তী এবং সুশান্ত দত্ত আদালতে জানান, গ্রেফতারের আগে অভিযুক্তেরা সব সময়েই তদন্তের কাজে পুলিশকে সাহায্য করেছেন। প্রয়োজন হলে এখনও করবেন। তাই তাঁদের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হোক। ওই আইনজীবীদের বক্তব্য, যখন আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে পুলিশ অভিযোগ করছে, সেই সময় দেবাদিত্যবাবু এবং জামির নিগমের শীর্ষ পদে ছিলেন। কিন্তু ওই পদে থেকে কেউ একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে সংস্থার পরিচালন বোর্ড। তাই আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে পুলিশের অভিযোগের ভিত্তি নেই।
সরকারি আইনজীবীরা পাল্টা সওয়ালে বলেন, লোহাচুর নিয়ে যাওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরের যে-জাহাজ সংস্থার সঙ্গে টাকার লেনদেন হয়েছিল, তারা ১৯৯৭ সালেই দেনার দায়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেনেও তাদের টাকা দেওয়া হয়েছিল। এবং সেই টাকা মেটানোর সিদ্ধান্ত যে দেবাদিত্যবাবুই নিয়েছিলেন, সেই প্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে বলে আইনজীবীরা আদালতে জানান।
সিআইডি সূত্রের খবর, কোন সংস্থার মাধ্যমে লোহাচুর রফতানি করা হবে, সেই ব্যাপারে অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমের পরিচালন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০০৩ সালের এপ্রিলে। বৈঠকের যে-আলোচ্য ও বিবরণ গোয়েন্দারা হাতে পেয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, দরপত্র ছাড়াই ওই সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকে নিগমের যে-সব ডিরেক্টর হাজির ছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। গোয়েন্দারা জানান, এর আগে এই মামলায় প্রতাপ বিসোয়াল, শম্ভুনাথ সামন্ত এবং আমন বনশালকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
বিধানসভার সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “লোহাচুর দুর্নীতিতে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জড়িত থাকলে, তিনি যে-দলেরই হোন, তাঁকে বা তাঁদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।” শোভনদেববাবু জানান, ২০০৫ সালে এই দুর্নীতির প্রতিবাদে তাঁর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা খাদ্য দফতরের সামনে টানা ৯৫ দিন আন্দোলন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, “ওই দুর্নীতির বিষয়টি জানার পরেই আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি বিধানসভাতেও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার বিষয়টি নিয়ে সমানে টালবাহানা করে যাচ্ছিল।” |