বাইপাসে কালিকাপুরের পরে আগুন খাস কলকাতার বৌবাজার আর শহরতলির মহেশতলায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহেশতলার মোল্লার বাজারের কাপড় এবং চায়ের একটি গুদাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় গুদামের লাগোয়া একটি স্টুডিও। রাতে বৌবাজারেও আগুন লাগে একটি গুদামে। কোথাও হতাহতের খবর নেই। তবে দু’টি এলাকাই ঘিঞ্জি এবং রাস্তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় দমকলকে। সরকারি সূত্রের খবর, মহেশতলায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বিগ্ন। এর তদন্ত চেয়েছেন তিনি।
দমকল জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মহেশতলার ওই গুদামে আগুন লাগে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের স্টুডিওয়। সেখানে তখন একটি ধারাবাহিকের শু্যটিং চলছিল। তবে কলাকুশলীদের নিরাপদে বার করে আনা হয়েছে। দমকলের ১৮টি ইঞ্জিন আসে। আনা হয় অগ্নি নির্বাপক ফোমও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া সত্ত্বেও দমকল আসতে অনেক দেরি করে। ফলে আগুন মারাত্মক আকার নেয়। দমকল জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে প্রথমেই ১০টি ইঞ্জিন গিয়েছিল। কিন্তু অপরিসর রাস্তায় গাড়ি ঢুকতে পারেনি। দূর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হচ্ছিল। দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানও বলেন, “দমকলের ইঞ্জিন সঙ্গে সঙ্গেই রওনা দিয়েছিল। রাস্তায় যানজটের কারণে দেরি হতে পারে।” |
জিৎ দাস নামে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা কয়েক জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ দেখি আগুনের শিখা। গুদাম থেকে আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে।” গুদামের পাশে বস্তি আছে। স্থানীয় যুবকেরাই সেখান থেকে গ্যাস সিলিন্ডার-সহ বিভিন্ন দাহ্য বস্তু সরিয়ে ফেলেন। সরিয়ে দেওয়া হয় বস্তির বাসিন্দাদেরও। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্টুডিওয়। কলাকুশলীরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্টুডিওটি বেআইনি। দমকলমন্ত্রী বলেন, “গুদামটির পাশেই একটি স্টুডিও ছিল। সেটি বৈধ কি না, খোঁজ নিচ্ছি।” কলাকুশলীরা জানান, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। গোটা এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। স্থানীয় যুবকদের সাহায্যে ক্যামেরা এবং অন্যান্য মালপত্র বার করে আনা হয়।
রাত ৮টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। গুদামের সামনের অপরিসর রাস্তা দিয়ে দমকল ঢুকতে পারছে না। গুদামের পিছনের দিক দিয়ে দমকলের গাড়ি ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। পাশের একটি বহুতল থেকে জল ঢেলে আগুন নেভাচ্ছিলেন বাসিন্দারা। ওই বাড়িটিও আগুনের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদেরও বার করে আনা হয়। আগুনের তাপে বহুতলটির জানলার কাচ, জলের পাইপ খুলে গিয়েছে। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অন্য বহুতলের বাসিন্দারাও। গুদামের একটি পাঁচিল ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলে যান কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, “গুদামটি বহু দিন বন্ধ ছিল। ভিতরে কাপড়, চা-সহ বিভিন্ন দাহ্য বস্তু থাকত। গুদামটি বেআইনি কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
রাত ৯টা নাগাদ বৌবাজারে কাগজের প্যাকিং বাক্সের গুদামে আগুন লাগে। তা থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের পাশে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডামজেন লেনে। একে সরু গলি, তার উপরে পুরসভার কাজের জন্য রাস্তা কাটা থাকায় দমকল সমস্যায় পড়ে। জলেরও অভাব ছিল। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গুদামে দাউদাউ আগুন জ্বলছে। আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারাও বেরিয়ে এসেছেন রাস্তায়। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলের এক আধিকারিক জানান, গুদামে কাগজ-সহ অনেক দাহ্য বস্তু মজুত ছিল। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গুদামে কোনও অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম ছিল না। পুলিশ জানায়, গুদামটির লাইসেন্স ছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। রাতেই ঘটনাস্থলে যান দমকলমন্ত্রী জাভেদ এবং এলাকার বিধায়ক স্মিতা বক্সী। |