সিপিএমের সমর্থন নিয়ে চলার ফলেই বামফ্রন্ট সরকার বিরোধী সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে সামিল হতে পারেননি বলে স্বীকার করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে ঘুরে যাওয়ার পর দিন বৃহস্পতিবার এই জেলার ক্যানিংয়ে এসেছিলেন প্রদীপবাবু। এই সফরে তিনি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সেই সময় তৃণমূলের সঙ্গে আমরা সামিল হতে পারিনি। কারণ তখন সিপিএমের সমর্থনে দিল্লিতে আমাদের সরকার চলছিল।” তবে একইসঙ্গে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “কংগ্রেসের মন্ত্রিত্বের লোভ নেই। সিপিএমকে তাড়াতেই কংগ্রেস তৃণমূলকে সমর্থন করেছিল। কংগ্রেস নীতি-আদর্শের উপরেই দাঁড়িয়ে।”
সাম্প্রতিক কালে তৃণমূল একাধিক বার কংগ্রেসকে প্রকারান্তরে সিপিএমের ‘বি-টিম’ বলে কটাক্ষ করেছে। বস্তুত, কংগ্রেস সম্পর্কে ওই মূল্যায়নের জন্যই ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গড়েন মমতা। তারপর বিভিন্ন উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক গিয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে জোট গড়েই তারা সিপিএমকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও কংগ্রেস সম্পর্কে মমতার ক্ষোভ রয়েই গিয়েছে। সিঙ্গুরের অনশন চলাকালীন বা নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় কংগ্রেস তাঁদের ‘পাশে’ দাঁড়ায়নি বলে মমতা একাধিক বার অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন, তখন কেন্দ্রে সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার চলছিল বলেই কেন্দ্র তাঁদের সাহায্য করেনি। প্রদীপবাবুর এ দিনের ‘স্বীকারোক্তি’ মমতার সেই অভিযোগকে আরও শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়ে দিল বলেই তৃণমূলের একাংশের অভিমত। তবে কংগ্রেসের একাংশের মতে, প্রদীপবাবু একটি ‘তথ্য’ দিয়েছেন মাত্র। বাস্তবতই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বে কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকার সিপিএমের সমর্থনে চলছিল। তা কারও অজানা নয়। সুতরাং, প্রদীপবাবু ওই কথা বলায় নতুন ‘বিতর্কে’র সুযোগ নেই। |
২৫ জানুয়ারি ক্যানিংয়ের আন্ধারিয়া গ্রামে কংগ্রেস-তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিবাদ ঘিরে কংগ্রেসের চার জন গুলিবিদ্ধ হন। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকই গুলি চালায়। এর প্রতিবাদেই ক্যানিংয়ে এসেছিলেন প্রদীপবাবু, আব্দুল মান্নান, ওমপ্রকাশ মিশ্র, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মানব মিত্র, মায়া ঘোষ প্রমুখ। কংগ্রেস কর্মীদের উপরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ‘অত্যাচার’-এর প্রতিবাদ করে প্রদীপবাবু বলেন, “আমাদের দুর্বল ভাববেন না। আপনাদের জেতাতে আমাদের কর্মীরা ঝান্ডা হাতে পথে নেমেছিলেন। তার বিনিময়ে আমাদের কর্মীরা গুলি খাচ্ছেন। তাও আমরা জোট ছাড়ার কথা ভাবছি না। কিন্তু এ রকম চলতে থাকলে দিল্লির সবুজ সঙ্কেত পেলেই আমরা সরে আসার কথা ভাবব।” প্রদীপবাবুর আরও বক্তব্য, “তৃণমূল এখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের মতো অহঙ্কার দেখাচ্ছে। বলছে, ওরা ১৮৫। কংগ্রেস ৪২। ওরা ভুলে যাচ্ছে, কংগ্রেসের সমর্থনেই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা রাজ্য সরকারের বিরোধী নই। আমরা রাজ্যে কৃষি বিপ্লব করতে চেয়েছিলাম। এখন সরকারকে কৃষকের ঋণ মিটিয়ে দিতে বলায় আমাদের তাচ্ছিল্য করছে। তৃণমূল ভুলে যাচ্ছে, কৃষকেরাই তাদের ক্ষমতায় এনেছে।” মান্নান অভিযোগ করেন, “বাম আমলে কংগ্রেস কর্মীদের উপরে যে অত্যাচার হত, তা তৃণমূলের আমলেও বন্ধ হয়নি। বাম আমলে বিধানসভায় শিশু-মৃত্যু, কৃষক-মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে যে উত্তর পাওয়া যেত, এখনও সেই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।” |