|
|
|
|
দমকল কেন্দ্র তৈরি নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ |
ফের জমি খোঁজা শুরু ক্যানিংয়ে |
সামসুল হুদা • ক্যানিং |
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্যানিং মহকুমায় দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর কলতলা মোড়ে। কিন্তু কাজ আর শুরু হয়নি। দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন সর্দার দু’বিঘা জমি দান করেছিলেন। সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন জমি না পাওয়ার সমস্যা কাটিয়ে এ বার হয়তো মাথা তুলবে দমকল কেন্দ্র। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচটি মহকুমার মধ্যে বারুইপুর, আলিপুর ও ডায়মন্ড হারবারে দমকলকেন্দ্র থাকলেও ক্যানিং ও কাকদ্বীপ মহকুমা এখনও কোনও দমকল কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। অথচ এই মহকুমায় বেশ কিছু ঘিঞ্জি বাজার এলাকা ছাড়াও প্রচুর সরকারি দফতর রয়েছে। ক্যানিং বা কাকদ্বীপ এলাকায় কোনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে বারুইপুর নয়তো ডায়মন্ড হারবার থেকে দমকলকর্মীদের যেতে হয়। কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দূরত্বের কারণে সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারে না দমকল। ফলে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। গত ২ বছরে গোসাবা, ক্যানিং, বাসন্তীতে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে এই সমস্যার কারণে পুড়ে গিয়েছে বাজার, দোকান-সহ ঘরবাড়ি। |
|
দমকল কেন্দ্রের জন্য শিলান্যাস করা সেই জমি।-নিজস্ব চিত্র। |
দীর্ঘদিনের এই সমস্যার কথা ভেবেই ক্যানিং মহকুমায় একটি দমকল কেন্দ্র তৈরি সিদ্ধান্ত নেয় আগের বাম সরকার। সেই মতো জমি খোঁজার কাজ শুরু হয়। কিন্তু মহকুমা শহরে উপযুক্ত জমি না পাওয়ায় অন্যত্র জমি খোঁজা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বাসন্তীর কলতলায় দমকল কেন্দ্রে জন্য ২ বিঘা জমি দান করেন সালাউদ্দিন সর্দার নামে স্থানীয় এক গ্রামবাসী। ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওই জমিতে দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য শিলান্যাস করেন তদানীন্তন দমকলমন্ত্রী প্রতীম চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তার পর কাজ আর শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল এবং কংগ্রেসর জোট সরকার। বাম আমলে না হওয়া কাজ এই সরকারের আমলে হবে এই আশা করছেন ক্যানিংয়ের মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, মহকুমায় একটি দমকলকেন্দ্রের আশু প্রয়োজন। বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তা বার বার বোঝা গিয়েছে। কিন্তু আগের সরকারের আমলে শুধু শিলান্যাস ছাড়া আর কিছু হয়নি। ক্যানিং মহকুমা শহরেই রয়েছে বৃহৎ মাছের বাজার। মহকুমা আদালত-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর। কোনও বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বারুইপুর বা কলকাতা থেকে দমকল এসে পোঁছনোর আগেই তো সব ছাই হয়ে যাবে।
ক্যানিং মহকুমায় দমকল কেন্দ্র তৈরির প্রসঙ্গে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ক্যানিংয়ে দমকল কেন্দ্রের প্রচণ্ড দরকার। এ জন্য আমি দমকল মন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছি। দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু জায়গার সমস্যার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।” দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য পূর্বতন বাম সরকারের নির্দিষ্ট জমি কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না জানতে চাওয়া হলে শ্যামলবাবু বলেন, “ওই জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই ওখানে দমকল কেন্দ্র তৈরি করা যাবে না। তবে জমির খোঁজ চলছে। পেলেই কাজ শুরু হবে।” মহকুমাশহরের মধ্যে না করে বাসন্তীতে দমকলকেন্দ্রের শিলান্যাস প্রসঙ্গে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী ও বর্তমান বিধায়ক সুভাষ নস্কর বলেন, “মহকুমা শহরের মধ্যে জমি পাওয়া যায়নি। তাই বাসন্তীতে এক ব্যক্তি জমি দান করায় সেখানেই শিলান্যাস করা হয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, “সেই সময় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি জমি দিতে অস্বীকার করায় বাধ্য হয়েই দমকলকেন্দ্র ক্যানিং থেকে বাসন্তীতে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তবে মহকুমা শহরে থেকে ওটা এমন কিছু দূরে নয়।” দমকল কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট ওই জমি নিয়ে সমস্যা আছে বলে মন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলের বক্তব্যের বিরোধিতা করে সুভাষবাবু বলেন, “মানুষের প্রয়োজনকে অস্বীকার করে ওঁরা এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন। আসলে ওটা আমার বিধানসভা এলাকা হওয়াতেই ওঁদের আপত্তি।” |
|
|
|
|
|