অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দীপশিখা ও সুদীপ্ত, দু’জনেই রক্তাক্ত অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যায় পড়ে ছিল নিউ ব্যারাকপুরের সাজিরহাটে ‘রীতা’ আবাসনের নীচে। অভিযোগ,অ্যাম্বুল্যান্স আসার পরে শুধু সুদীপ্তকেই হাসপাতালে নিয়ে যান তার মা মীনাক্ষী চাকী। দীপশিখাকে কেন রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই ফেলে রেখে গেলেন সুদীপ্তের বাড়ি লোকেরা? দমদমের মেঘনাদ সাহা রোডে নিজের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্নায় ভেঙে পড়ে এই প্রশ্নই তুললেন ওই কিশোরীর মা শাশ্বতী দাম। তিনি বলেন, “ওই অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে যদি আমার মেয়েটাকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তা হলে ও হয়তো বেঁচে যেত। এ রকম অমানবিক কাজ কী করে কোনও মানুষ করতে পারেন?”
দমদমের দীপশিখার বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আত্মীয়দের ভিড়। ওই কিশোরীর মামা কল্লোল মজুমদার বলেন, “স্কুল থেকে কোনও দিনই বাড়ি ফিরতে দেরি করত না দীপশিখা। প্রতিদিন ছুটি হলেই স্কুলবাসে করে বাড়ি চলে আসত। বুধবারও দীপশিখার বাবা পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্কুলবাসের অপেক্ষায়। বাস এলেও দীপশিখা আসেনি। মেয়ে কোথায় জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পারেন, দীপশিখা স্কুলবাসে ওঠেনি। তখন থেকেই খোঁজ শুরু হয়।” কল্লোলবাবু আরও জানান, খোঁজ করা হয় গঙ্গানগরে দীপশিখার স্কুলেও। কিন্তু স্কুল-কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেননি। শেষে ঘোলা থানার ওসি খবরটি জানান। কল্লোলবাবুর আফশোস, “দীপশিখাকে যদি ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তা হলে বোধহয় ও বেঁচে যেত।” শাশ্বতীদেবীর বোন প্রণতি সেন প্রশ্ন তোলেন, “সুদীপ্তের মা ডাক্তার। তবু তিনি একটি রক্তাক্ত মেয়েকে ফেলে শুধু নিজের ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে চলে গেলেন?” |
দীপশিখার পরিজনেরাই নন, একই প্রশ্ন তুলেছেন নিউ ব্যারাকপুরের সাজিরহাটে সুদীপ্তদের প্রতিবেশীরাও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অ্যাম্বুল্যান্সে করে সুদীপ্তকে নিয়ে যাওয়ার পরে ওই আবাসনের নীচে কিছুক্ষণ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল দীপশিখা। পুলিশ এসে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিশোরীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই আবাসনের বাসিন্দা ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা বারবার সুদীপ্তের মাকে বলি দীপশিখাকেও অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিতে। অ্যাম্বুল্যান্স আটকাতে আমরা ওই আবাসনের গেটও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি শোনেননি। সুদীপ্তের মা বলেন, আপনারা ওই মেয়েকে দেখুন। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।” সুদীপ্ত বারাসতের যে হাসপাতালে রয়েছে, সেখানে এ দিন ভিড় জমান তার পরিজনেরা। তার মা মীনাক্ষীদেবী কথা বলতে চাননি। ওই কিশোরের জ্যেঠিমা লীনা চাকী একই আবাসনের তিনতলায় থাকেন। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার সময়ে তিনিও চিৎকার শুনে নীচে নেমে আসেন। তিনিই খবর দেন সুদীপ্তের মাকে। এ দিন হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে লীনাদেবী বলেন, “সুদীপ্তকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ওর মা মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। তখন বুঝতে পারেননি, কী করা উচিত।” চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন অবশ্য বলেন, “চিকিৎসক হয়েও ওই ভদ্রমহিলা যদি এটা করে থাকেন, তা তাঁর কর্তব্যে শপথের বিরোধী। কোনও সাধারণ মানুষের কাছেও এতটা অমানবিকতা আশা করা যায় না। আমরা খোঁজ নেব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবব।” |