উদ্বেগ সিপিএম সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে
সাংসদ, বিধায়কেরাও অর্থ দিচ্ছেন না নিয়মিত
রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে বিষয়টি নিয়ে প্রায় ভাবতেই হয়নি, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই দলীয় তহবিলের বিষয়টিই গভীর ভাবে ভাবাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে! গণ-সংগ্রহে দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে। তার উপর সাধারণ পার্টিকর্মী থেকে শুরু করে বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ-বিধায়কদের কাছ থেকেও প্রাপ্য অর্থ নিয়মিত জমা পড়ছে না। ফলে পার্টি-তহবিলে ‘চাপ’ বাড়ছে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার সদ্য শেষ হওয়া জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উদ্বিগ্ন দলীয় নেতারা জানাচ্ছেন, দল ক্ষমতা থেকে সরতেই অর্থ-সংগ্রহ অভিযানে সাড়া কমেছে। আগে যাঁরা স্বেচ্ছায় অর্থ সাহায্য করতেন, এখন তাঁদের কাছে ‘সামান্য’ অর্থ চেয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। তাই অর্থ-সঙ্কটের বিষয়টি আর ‘গোপন’ করতে পারেননি জেলা সম্পাদকও। জেলা পার্টির তহবিলে যে চাপ বাড়ছে, তা অজানা নয় রাজ্য নেতৃত্বেরও। তাই জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে মেদিনীপুরে এসে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক দাশগুপ্ত তহবিল সম্পর্কে জেলা সম্পাকদের কাছেই জানতে চান। উদ্বেগ প্রকাশ করেও জেলা সম্পাদক তাঁকে জানান, সম্মেলন উপলক্ষে ৮০ শতাংশের উপর পার্টি-সদস্য অর্থ সাহায্য করেছেন। তবে সম্মেলেনের প্রতিবেদনে দীপকবাবু বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলা পার্টির আর্থিক ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির প্রভূত উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। পেরিয়ে আসা সময়ে আমাদের নতুন নতুন আক্রমণ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে। ফলে, রাজনৈতিক -সাংগঠনিক কাজকে সচল রাখার প্রয়োজনে আর্থিক দায়দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্বের সাধারণ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আরও অনেক বেশি আর্থিক দায়দায়িত্ব সমগ্র পার্টির উপর পড়ছে, পড়বে। ফলে জেলা পার্টির তহবিলে চাপ বাড়ছে’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেলা পার্টির তহবিল মূলত পার্টির অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের উপরেই নির্ভরশীল। জেলা কমিটির সদস্য, জোনাল-লোকাল কমিটির সম্পাদকগণ, জেলা কমিটির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন লোকাল কমিটি ও শাখা সদস্যদের ‘লেভি’ ও এক দিনের আয় জেলা তহবিলে জমা পড়ে। বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ-বিধায়কদের ভাতা, পেনশন, কমিটি সভা, অধিবেশন ভাতা এবং জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ভাতাও তহবিলে জমা নেওয়া হয়। এ ছাড়া, জোনাল কমিটি ও লোকাল কমিটি এলাকার গণসংগ্রহের উপর জেলা কমিটি পার্টি-সদস্য সংখ্যার অনুপাতে ধার্য কোটা এবং জেলার প্রতিটি শাখার রাজ্য কমিটিকে দেয় ধার্য কোটা সংগ্রহ করে জমা দেয়’। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা-পার্টির তহবিল নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় ২০০৭-এর সম্মেলনেই একটি ‘পার্টি-টিম’ গঠন করা হয়। এই টিমই জেলার তহবিল রক্ষণাবেক্ষণ করে। কিন্তু, পরবর্তীকালে জেলা কমিটির সভায় পরীক্ষিত হিসাব সময়মতো পেশ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। বিষয়টি ‘গোপন’ না-করে জেলা সম্পাদক প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘ধারাবাহিক ভাবে পার্টি-টিমের সভা ও সদস্যদের দায়িত্ব পালনে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন’।
জোনাল ও লোকাল কমিটির হিসাব বছরে এক বার, বিগত বছরের জমা-খরচের হিসাব ও আগামী বছরের বাজেট জেলা-কেন্দ্রে জমা পড়ে। এই রিপোর্টগুলি পার্টি-টিমের এক জন সদস্য পরীক্ষা করেন ও সমস্যা থাকলে জেলা নেতৃত্বের নজরে আনেন। তবে এই রিপোর্টগুলি জেলায় জমা পড়া ও আয়-ব্যয়ের হিসেবের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের (যেমন, লেভি-গণসংগ্রহ প্রভৃতি) রিপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এমনকী, জেলা-কেন্দ্র থেকে গণসংগ্রহের জন্য যে রসিদ-কুপন দেওয়া হয়, তার হিসাবও জেলা-কেন্দ্রে নথিভুক্ত থাকে। কিন্তু, জোনাল ও লোকাল কমিটিগুলি থেকে কাটা, না-কাটা রসিদ-কুপন জেলা-কেন্দ্রে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। সাধারণত সিপিএমের মতো দলে এই প্রবণতা একেবারেই অকল্পনীয়। তাই পার্টির অভ্যন্তরে উদ্বেগ বাড়ছে। জেলা সম্পাদক তাঁর প্রতিবেদনে কবুল করেছেন, ‘জেলার বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক-সহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ভাতা, পেনশন, কমিটি সভার জমা অর্থ আলাদা ভাবে নথিভুক্ত রাখা হয়। নথি থেকে দেখা যায় যে, পার্টির প্রাপ্য অর্থ জেলা তহবিলে নিয়মমতো ও নিয়মিত জমা পড়ে না। প্রাক্তন সাংসদ-বিধায়কদের জেলা পার্টির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার পরেও কয়েক জন জেলা-কেন্দ্রে কোনও রিপোর্ট দেননি। অনুরূপভাবে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত কর্মকর্তাদের ভাতা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে সবাই জমা দিচ্ছেন, রিপোর্ট দেখে এ দাবি করা যাচ্ছে না’।
ক্ষমতায় না থাকলে কী হয়, দীর্ঘ দিন পর সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে উদ্বেগ বাড়ছে সিপিএমে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.