সি বি আই আদালতের হাতে চিদম্বরমের ভাগ্য
কের পর এক ছোট-বড় বিতর্ক সত্ত্বেও বরাবর রাজনৈতিক ভাবে প্রাসঙ্গিক থেকেছেন তিনি। এখন কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই সরু সুতোয় ঝুলছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ভবিষ্যৎ।
টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে এ রাজার পাশাপাশি চিদম্বরমও দায়ী বলে অভিযোগ করেছিলেন জনতা দলের নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। ২০০৮ সালে স্পেকট্রাম বণ্টনের সিদ্ধান্তের সময়ে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ অবশ্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে কোনও রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বিষয়টি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিচারক ও পি সাইনির বিশেষ আদালতে। ওই আদালতের পরবর্তী শুনানি আগামী শনিবার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে রায় দিতে হবে নিম্ন আদালতকে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য আজকের রায়েই বলেছে, স্পেকট্রাম বিলির ব্যাপারে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গে রাজা কোনও আলোচনাই করেননি। সর্বোচ্চ আদালতের এই ‘শংসাপত্র’ই কিন্তু নিম্ন আদালতে কংগ্রেসের অস্ত্র হবে।
এটা ঠিকই যে, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে চিদম্বরমকে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, আদালত শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না চিদম্বরমের। আর খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুর্নীতি মামলার জেরে পদত্যাগ করতে হলে বিরোধীরা রাজনৈতিক আক্রমণের নিশানা করবেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেই। ফলে চিদম্বরমের ‘পতনের’ সঙ্গে সঙ্গে নাভিশ্বাস উঠবে গোটা সরকারেরই।
নর্থ ব্লকে নিজের দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: পি টি আই
আজই বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি চিদম্বরমকে বলেছেন ‘লেমডাক মন্ত্রী’। বস্তুত, আজকের রায়ের ফলে চিদম্বরমের ‘ভূমিকা’ প্রকাশ্য দিবালোকে এসে পড়ল বলে গোটা দিন ধরে প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা দাবি তুলেছেন, বিশেষ আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা না করে চিদম্বরমের উচিত এখনই পদত্যাগ করা। অন্য দিকে, আজ চিদম্বরম অন্যান্য দিনের মতোই প্রকাশ্যে ছিলেন অচঞ্চল। সকালে রায় বেরোনোর সময়ে ছিলেন নর্থ ব্লকে। তার পর টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল এসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুপুরে প্রত্যেক দিনের মতোই বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারতে যান। তবে এ দিন তার পরে আর অফিসে ফেরেননি। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিতে দেখা যায় তাঁকে।
এমন নয় যে এই প্রথম চিদম্বরমকে নিয়ে বিপাকে পড়ল কংগ্রেস। পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গড়া হবে বলে ২০০৯-এ তিনি হঠাৎ ঘোষণা করে বসেন। তার পর গত বছরের শেষের দিকে ফের বলেন যে, ঈদের আগেই তেলেঙ্গানা-বিতর্ক মিটিয়ে ফেলবে সরকার। চিদম্বরমের এ ধরনের বিবৃতির জেরে তৈরি হওয়া
রাজ্যজোড়া বিতর্ক আর বিভ্রান্তির যথেষ্ট মাসুল দিতে হয় কংগ্রেসকে। আবার সংসদের গত অধিবেশনে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি অভিযোগ তোলে, পদের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর এক সময়ের মক্কেল শিল্পপতি এস পি গুপ্তর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন চিদম্বরম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বরখাস্তের দাবিতে মুলতুবি হয়ে গিয়েছিল লোকসভার অধিবেশন। এমনকী তাঁর নিজের রাজ্য তামিলনাড়ুতেও চিদম্বরম এবং তাঁর ছেলে কার্তি-কে নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে শিবগঙ্গা কেন্দ্র থেকে তাঁর ‘বিতর্কিত’ জয় নিয়েও যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও সাংসদ পদ থেকে চিদম্বরমের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করেছিলেন। এ সবের সঙ্গেই যোগ হয় স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি। গত দেড় বছর ধরে যে বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে চিদম্বরমের উপরে আক্রমণ শানিয়ে আসছে বিজেপি।
তবু আজকের তারিখের আগে চিদম্বরমের গায়ে সেই অর্থে কোনও ‘দাগ’ লাগেনি। ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার উচ্চাসনে তিনি ঠায় আসীন। অথচ শুধু বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলি নয়, কংগ্রেসের মধ্যেও চিদম্বরম-বিরোধী একটি বিরাট গোষ্ঠী সদা সক্রিয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাওবাদী দমনে তাঁর কড়া নীতি দলের মধ্যেই সমালোচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরানো হবে, এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছে একাধিক বার। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিদম্বরমের ‘রাজনৈতিক ক্ষতিসাধন’ করতে পারেনি কেউ। দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা দিগ্বিজয় সিংহ এক বার তাঁকে ‘উদ্ধত’ বলে অভিযুক্ত করে প্রবন্ধ লিখেও পরে সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।
এমনকী স্পেকট্রাম-বিতর্কে লাগাতার বিরোধী আক্রমণের মুখে পড়েও চিদম্বরম পাশে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। গত বছর স্পেকট্রাম বণ্টন বিষয়ক অর্থ মন্ত্রকের গোপন নোট ফাঁস হওয়া ঘিরে তীব্র জলঘোলার সময়েও চিদম্বরমকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী’ বলে অভিহিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিদম্বরমের এই ‘শক্তির’ মূল উৎস, ১০ জনপথের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। ২০০৪-এ চিদম্বরম কংগ্রেস সদস্যও ছিলেন না, কংগ্রেস সমর্থিত হিসেবে ভোটে লড়েন। অথচ অর্থ মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক তাঁকে দিতে পিছপা হননি সনিয়া-মনমোহন। তখন চিদম্বরমই ছিলেন একমাত্র অ-কংগ্রেসি মন্ত্রী, যিনি নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি-সহ মন্ত্রিসভার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য ছিলেন। প্রিয়ঙ্কা বঢরার নেতৃত্বাধীন রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। তা ছাড়া, নর্থ ব্লকে শিবরাজ পাটিলের ছেড়ে যাওয়া আসনে বসার পর থেকে চিদম্বরম দেশে সার্বিক নাশকতামূলক কাজকর্মে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছেন। কিছুটা হলেও কমেছে কাশ্মীর সীমান্তে অনুপ্রবেশ, দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি নাশকতা।
তবে এহ বাহ্য। দু’সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হবে চিদম্বরমের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। সে দিকেই নজর রাখছেন গোটা দেশের রাজনৈতিক কুশীলবরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.