চুক্তির দিন শেষ হয়ে গেলেও তার নবীকরণের ব্যবস্থা করেনি রেল বোর্ড। তাই রেলসেবকদের আর কাজ করার অধিকার নেই বলে দাবি তুলে বৃহস্পতিবার সারা দিন ওই সেবকদের কাজই করতে দিলেন না রেলের কুলিরা। নিজেরাও কোনও কাজ করলেন না। রেলসেবকেরা ট্রলিতে মাল বহন করেন। কুলিরা মাথায়। তাঁদের কাউকেই না-পাওয়ায় মালপত্র নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় যাত্রীদের। এক সময় বস্তা, পেটিতে হাওড়ার প্ল্যাটফর্ম ভরে যাওয়ায় সেখানে যাতায়াত করাই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, চুক্তি নবীকরণ সমস্যাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষই মারমুখী হয়ে ওঠে। অভিযোগ, কুলিরা ওই সময় রেলসেবকদের ট্রলি উল্টে দেন। দু’পক্ষ পরস্পরের দিকে ধেয়ে যায়। আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি সামাল দিতে রেলের পদস্থ কর্তারা কুলি ও রেলসেবকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু ফল না-হওয়ায় কুলিরা বিকেলে ফের হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভ চলে রাত পর্যন্ত।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ওই রেলসেবকদের নিয়োগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি হাওড়া স্টেশনে একটি অনুষ্ঠানে যাত্রীদের সুবিধার জন্য রেলসেবক নিয়োগের কথা ঘোষণা করেন। ঠিক হয়, রেলের ‘আউটসোর্সিং’ হিসেবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আর্থিক সহযোগিতায় একটি সমবায়ের মাধ্যমে বেকার ও দুঃস্থ যুবকদের এই কাজে নেওয়া হবে। এই নিয়ে রেলের সঙ্গে ব্যাঙ্কের এবং ব্যাঙ্কের সঙ্গে শালিমারের একটি সমবায় ব্যাঙ্কের এক বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বুধবার সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। রেল সূত্রে বলা হয়, ব্যাঙ্ক এ দিন রেলসেবকদের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণ করলেও ব্যাঙ্কের সঙ্গে রেল বোর্ডের চুক্তির নবীকরণ হয়নি।
রেল-কুলিরা বলছেন, রেল-কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেননি। তাই স্টেশন চত্বরে রেলসেবকদের কাজ করার কোনও অধিকার আর নেই। আর রেলসেবদের অভিযোগ, প্রথম দিন থেকেই কুলিরা তাঁদের সহ্য করতে পারছেন না। চুক্তি নবীকরণের ধুয়ো তুলে এখন কুলিরা তাঁদের পাকাপাকি ভাবে স্টেশন থেকে তাড়াতে চাইছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, রেলসেবকদের চুক্তি নবীকরণ না-হওয়ায় মমতা ক্ষুব্ধ। কেন তা হল না, রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে সেটা দেখতে বলেছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত রেল বোর্ড ওই চুক্তি নবীকরণ করেনি বলে রেল সূত্রের খবর। আন্দোলনকারী কুলিরা জানান, আজ, শুক্রবার রেলসেবকেরা কাজ করতে গেলে তাঁরা ফের বাধা দেবেন।
হাওড়া স্টেশন রেল-কুলিদের নেতা ধূপনকুমার যাদব বলেন, “রেল যতক্ষণ না নতুন চুক্তি দেখাতে পারছে, তত ক্ষণ রেলসেবকদের কাজ করতে দেওয়া হবে না।” হাওড়ার রেলসেবকদের চিফ সুপারভাইজার দ্বারকানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্কের সঙ্গে আমাদের চুক্তি পুনর্নবীকরণ হয়েছে বলেই আমরা কাজ করছি। রেলের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে কি না, সেটা ব্যাঙ্কের ব্যাপার। তবে শুনেছি, সেটাও হয়েছে।”
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অধিকারীক সমীর গোস্বামী বলেন, “বুধবার ব্যাঙ্কের সঙ্গে রেলের চুক্তি যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তা আগেই রেল বোর্ডকে জানাই। বোর্ড শীঘ্রই সিদ্ধান্ত জানাবে। শুনেছি, চুক্তি নবীকরণ হয়েছে। তবে সরকারি ভাবে কাগজ আসেনি। আসলে জানানো হবে।” |