একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে হতাশার জেরেই এক কনস্টেবল খাস মহাকরণে ডিউটি চলাকালীন নিজের রাইফেলের গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এই অবস্থায় নিচু তলার পুলিশকর্মীদের ‘কাউন্সেলিং’-এর নির্দেশ দিয়েছেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে মহাকরণে ঢোকার সময়েই তিনি কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (রিজার্ভ ফোর্স) অশোককুমার বিশ্বাসকে এই নির্দেশ দেন।
মহাকরণ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ মহাকরণের সেন্ট্রাল গেটে মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামেন। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকমতো রয়েছে কি না, তা দেখার জন্য তখন ওই গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিসি (আরএফ)। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, বুধবার রাতে মহাকরণে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল? ডিসি তাঁকে জানান, একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে হতাশা থেকেই সহদেব মণ্ডল নামে ওই কনস্টেবল নিজের সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। ডিসি-কে নিয়েই লিফটে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তাঁকে জানান, নিচু তলার পুলিশকর্মীদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করাতে হবে। কোনও পুলিশকর্মীকে মনমরা দেখলেই তাঁর সঙ্গে ভাল করে কথা বলে উঁচু তলার অফিসারেরা যেন তাঁর বিষণ্ণতার কারণ জানার চেষ্টা করেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর হতাশা দূর করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী লিফট থেকে নেমে তাঁর ঘর পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে ডিসি-র সঙ্গে কথা বলেন। ডিসি তাঁকে জানান, রিজার্ভ ফোর্সে নিয়মিত কাউন্সেলিং হয়। তিনি নিজেও কাউন্সেলিং করেন। মুখ্যমন্ত্রী তা জেনে ডিসি-কে বলেন, “যাতে আরও ভাল ভাবে কাউন্সেলিং হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।” ডিসি (সেন্ট্রাল) শ্রী ত্রিপুরারি জানান, মৃত কনস্টেবলের মোবাইলের ‘কল লিস্ট’ পরীক্ষা করা হয়েছে। কথা হয়েছে তাঁর পরিবারের সঙ্গেও। ওই দু’টি সূত্রে অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঘিরে হতাশারই শিকার হয়েছেন সহদেব।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মহাকরণের ভিতরে নিজের সার্ভিস রাইফেল থেকে নিজের চোয়ালে গুলি চালান ওই পুলিশকর্মী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মারা যান তিনি। পুলিশ জানায়, বাঁকুড়ার বড়াবাখড়া গ্রামের বাসিন্দা সহদেব কাশীপুরের পুলিশ ব্যারাকে থাকতেন। তাঁর দাদা, জয়দেবও পুলিশকর্মী। তিনি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানায় কর্তব্যরত। আগামী ৮ মার্চ সহদেবের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এই অবস্থায় সহদেব কেন আত্মহত্যা করলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল পুলিশের মধ্যেও। এ ব্যাপারে রাতেই মহাকরণে কর্তব্যরত অন্য পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। পুলিশি সূত্রের খবর, বুধবার মহাকরণে ডিউটিতে থাকা কর্মীদের একাংশ জানান, তাঁরা ওই রাতে সহদেবের আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি। তবে রাত পৌনে ৮টা নাগাদ সহদেবের মোবাইলে ফোন এসেছিল।
পুলিশি সূত্রের খবর, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের গুলি চালানোর ফলে সহদেবের খুলির একাংশ উড়ে যায়। এ দিন এসএসকেএমে ময়না-তদন্তের পরে ওই পুলিশকর্মীর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর জেঠতুতো দাদা চিত্ত মণ্ডল বলেন, “এক সপ্তাহ আগে বাড়ি এসে ভাবী স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের জামাকাপড় কিনে ছিল সহদেব। তাঁর আত্মহত্যার কারণ পরিষ্কার নয়।” |