বইমেলায় এ বছর গাড়ির বড্ড ভিড়।
এক নম্বর এবং চার নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার পথে গাড়িতে গাড়িতে ছয়লাপ। মেলায় ঢুকে অনেকেরই প্রশ্ন: মেলার মধ্যে এত গাড়ি কেন? অন্য বার তো দেখা যেত না। মেলার ভিতরে তিন নম্বর গেটের কাছেও সব সময় অন্তত চারটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তুমুল ভিড়ে যখন মানুষ কোনও রকমে ঠেলাঠেলি করে এগোচ্ছে, তখন সামনে গাড়ি থাকলে অসুবিধে অনেকটাই বেড়ে যায় বই কি। বুধবার তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে একটা পুলিশের গাড়িও মেলার মাঝখানে মোতায়েন করা হয়েছে। ঢুকছে জলের পাউচ নিয়ে আস্ত লরি।
অথচ বৃহস্পতিবারও বইমেলায় ঢুকেছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। এক নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার সময় সার সার গাড়ি আর টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান। সেখানেই রাস্তার অন্য পারে টিভি চ্যানেল বা কোনও বেসরকারি কলেজের কুইজ প্রতিযোগিতা এবং তাৎক্ষণিক পুরস্কার বিতরণ। ফলে বেদম ভিড়। মেলায় ঢুকতে গিয়ে মানুষের হয়রানির এক শেষ। তা ছাড়া এ বছর নেতা-মন্ত্রীরা অনেক বেশি সংখ্যায় মেলায় যাচ্ছেন। প্রতিদিনই একাধিক মন্ত্রী মেলায় থাকছেন। তাঁরা মেলায় ঢুকছেন পাইলট গাড়ি নিয়ে।
গাড়ি ঢোকার ফলে ভিড়ের বইমেলায় যে অসুবিধা হয় তা মেনে নিয়ে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের যুগ্ম সম্পাদক সুধাংশু দে বললেন, “গাড়ি ঢোকার জন্য আমরা প্রতি দিন পনেরোটা পাস দিই। মন্ত্রীদের অবশ্য পাসের দরকার হয় না।” এ ছাড়াও কিছু লেখক, সাহিত্যিক এবং ভিআইপি-কে প্রতিদিনই কয়েকটি করে গাড়ি ঢোকার পাস দেওয়া হয় বলে জানান সুধাংশুবাবু। এর পরে মেলার ভিতরে এত গাড়ির কারণ খানিকটা বোঝা যায়।
এত বড় বইমেলা, এত লেখক-পাঠক-প্রকাশক সম্মেলন, কিন্তু বাংলা প্রকাশনা জগতে আর্কাইভ বা লেখ্যাগারের ভাবনা খুব দুর্বল। আজ বইমেলায় এক বক্তৃতায় এমনই অভিযোগ আনলেন ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র। তাঁর বক্তব্য, এমনিতেই পাঠাগারে বাংলা বই বাঁধাইয়ের সময় তার ‘প্রচ্ছদ’ বা কভার ফেলে দেওয়া হয়। প্রকাশকেরাও তথৈবচ। সিগনেট প্রকাশনার উদাহরণ দিচ্ছেন তিনি। অবনীন্দ্রনাথের ‘ক্ষীরের পুতুল’ থেকে শুরু করে তাঁদের বেশির ভাগ বইতেই ‘প্রথম সিগনেট সংস্করণ’-এর তারিখ। “ইতিহাস মুছে দিতে সিগনেটের মতো কেউ পারেনি”, বলছিলেন তিনি। অথচ বইয়ের আগে পুঁথি ছিল। তখন লেখক-পাঠক-লিপিকর ছিলেন। ছাপাখানা এবং প্রকাশককে ঘিরেই তো ক্রমে মুদ্রক, প্রুফ-রিডার ইত্যাদি পেশার শুরু। কিন্তু সেই সব নিয়ে তথ্য পাওয়া ভার। “এখন যাঁরা প্রকাশক, কাগজপত্র রাখছেন? আর্কাইভস রাখছেন?” বাংলা প্রকাশনা জগতকে এ ভাবেই ‘ঐতিহাসিক’ প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন তিনি।
তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগে এ রাজ্যের হাল খুবই খারাপ। জ্ঞান ও তথ্যের বিপুল সম্ভার নিয়ে বিশাল বইমেলার আয়োজন। সেখানে তথ্য জানার অধিকার নিয়ে সচেতনতা প্রচার করতে স্টল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বইপত্র নিয়ে এই প্রথম মেলায় এসেছে অল অসম পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাংলা, অসমিয়া, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী এবং বোরো ভাষায় লেখা নানা বইয়ের বড় সম্ভার রয়েছে ওই স্টলে। সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে উদয়ন বিশ্বাস সম্পাদিত পত্রিকা ‘একা এবং কয়েক জন’। বিষয়: অসমের বাঙালির রাজনীতি-ভাবনা। এবং প্রসূন ভৌমিক সম্পাদিত ‘নাইন্থ কলাম’ পত্রে অসমের কৃতী বাঙালি বিশেষ সংখ্যা।
এ দিনই প্রকাশ পেল ফারুক আহমেদ সম্পাদিত পত্রিকা ‘উদার আকাশ’। বিষয়, মর্যাদার সন্ধানে। বেরলো মোশারফ হোসেনের দুটি উপন্যাস ‘জন্মভূমি’ এবং ‘পরিবর্তন’, আমজাদ হোসেনের প্রবন্ধ সংকলন ‘নিরীক্ষণ: সাহিত্য ও সংস্কৃতি’। বেরলো সিদ্ধার্থ সিংহের ‘৫১ ছোটদের ছোটগল্প’ এবং উপন্যাস ‘কাঁটাতার’। বেরিয়েছে সমরেশ মজুমদারের ‘সোনার শেকল’ এবং প্রফুল্ল রায়ের ‘খোঁজ’। প্রকাশিত হয়েছে শক্তিনাথ ঝা-র সংকলন, সম্পাদন ও বিশ্লেষণে ‘দুদ্দু শাহ’র পদাবলী’, সুগত সিংহের ‘যুক্তি তক্কো ঝত্বিক’, মেঘ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ ‘বিলাপকুসুমাঞ্জলি’। বিবেকানন্দের জীবন নিয়ে শান্তি সিংহের পূর্ণাঙ্গ নাটক ‘বিশ্ববিবেক বিবেকানন্দ’ প্রকাশিত হল এ দিন। |