বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা কিনতে গিয়ে কোল ইন্ডিয়ার কাছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা ধার হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের। বিপুল ধারের কারণে আগামী গ্রীষ্মে যাতে কোল ইন্ডিয়া থেকে কয়লা পেতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য বাজার থেকে ঋণ নিয়েই কিছু টাকা শোধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগম কর্তৃপক্ষ। খুব শীঘ্রই রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও ব্যাঙ্কের কাছে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে বাড়তি মাসুল ও ‘ফুয়েল সারচার্জ’ খাতে মাসে ৬০-৬৫ কোটি আয় বাড়ার সম্ভাবনা। বাজার থেকে ধার করার পিছনে সেটাও খানিকটা ভরসা জোগাচ্ছে নিগমকে।
চলতি আর্থিক বছরে (২০১১-১২) সময় মতো বিদ্যুতের মাসুল না বাড়ায় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। যে কারণে কয়লার দামের অনেকটাই মেটানো যায়নি কোল ইন্ডিয়াকে। বকেয়া বাড়তে বাড়তে হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে বিদ্যুতের মাসুল বেড়েছে। এমনকী, জ্বালানির বাড়তি খরচ বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘ফুয়েল সারচার্জ’ নেওয়ারও অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকরও হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ কর্তারা হিসেব কষে দেখেছেন, বর্ধিত হারে মাসুল ও সারচার্জ আদায় হলে নিগমের মাসে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকা আয় বাড়বে। আর সেই ভরসাতেই নিগম কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে ঋণ নিয়ে কোল ইন্ডিয়ার ধার বেশ খানিকটা মিটিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের যে-হেতু আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভাল হয়েছে, তাই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এখন ঋণ দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মকালে কয়লা কিনতে টাকার কোনও অসুবিধা হবে না। মণীশবাবুর কথায়, “আমি কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গেও কথা বলেছি, যাতে কোল ইন্ডিয়া রাজ্যের চাহিদা মতো কয়লা সরবরাহ করে।”
রাজ্যে সাধারণত গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা হয় ৫৫০০ মেগাওয়াটের মতো। তার অর্ধেকের বেশি মেটাতে হয় নিগমের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকেই। আগামী গ্রীষ্মে কেন্দ্রগুলির উৎপাদন পুরোদমে চালিয়ে যেতে হলে কয়লার জোগানও স্বাভাবিক থাকা দরকার। নিগম-কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, কোল ইন্ডিয়ার ধার কিছুটা মিটিয়ে দিতে পারলে কোল ইন্ডিয়াও চাহিদা মতো কয়লা সরবরাহ করবে। বিল না মেটানোর যুক্তি দেখিয়ে কয়লার জোগানে রাশ টানবে না।
সম্প্রতি নিগমের আর্থিক সঙ্কট মেটাতে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি এখন নিগম-কর্তারা খতিয়ে দেখছেন। নিগমের এক কর্তা বলেন, “এর আগে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার বেশির ভাগই শোধ হয়ে গিয়েছে। তাই ফের ঋণ পাওয়াটা সহজ হবে আমাদের পক্ষে। যে কারণেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”
কোলাঘাট, ব্যান্ডেল, বক্রেশ্বর, সাঁওতালডিহি ও সাগরদিঘি, এই ৫টি কেন্দ্রের জন্য নিগমের গড়ে মোট ৫৫-৬০ হাজার টন কয়লা লাগে। তাতে বিদ্যুৎ তৈরি হয় ৩০০০ মেগাওয়াটের মতো। এর ২৭০০-২৮০০ মেগাওয়াটই পায় রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থা। এ বছর গ্রীষ্মে চাহিদা বাড়বে ধরে নিয়েই কয়লার বাড়তি জোগানের ব্যবস্থা করে রাখতে চাইছে নিগম। |