গ্রাহকদের হয়রানি রুখতেই রায় কার্যকর করতে চার মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশ দিয়েছে এই সময়ে প্রতিটি সংস্থাকে পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার। ফলে এখনই হয়তো টোল খাবে না দেশের মোবাইল পরিষেবা। কিন্তু তার পর? তখন কি সমস্যার মুখে পড়বেন লাইসেন্স খোয়ানো সংস্থার গ্রাহক? নাকি সকলের জন্যই আরও মহার্ঘ হবে মোবাইলে কথা বলা? বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ন’টি সংস্থার ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করার পর আপাতত সারা দেশে ঘুরপাক খাচ্ছে এই সব প্রশ্নই।
টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের মতে, এই রায়ের জেরে গ্রাহক হয়রানির সম্ভাবনা কম। কারণ, চার মাস পর কোনও সার্কেলের স্পেকট্রাম নিলাম হলে, তখন ফের তা কিনে নেওয়ার সুযোগ পাবে টেলি সংস্থাগুলি। ফলে দামের লড়াইয়ে জিতে নিজেদের পুরনো জমি ধরে রাখার সুযোগ পাবে তারা। এবং সে বিষয়ে সংস্থা সফল হলে, গ্রাহকেরও বাধা থাকবে না পুরনো সংযোগ ব্যবহারে। তবে কোনও কারণে সংস্থা নিলাম থেকে সরে দাঁড়ালে, বা দরের লড়াইয়ে হেরে গেলে অবশ্য অন্য সংস্থার সংযোগ নিতে হবে গ্রাহককে। কিন্তু এখন মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালু হয়ে যাওয়ায়, নম্বর এক রেখেও সংস্থা পাল্টাতে পারবেন তাঁরা। ট্রাই-এর চেয়ারম্যান জে এস শর্মা বলেন, “সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনে এমএনপি সুবিধা নিতে পারবেন গ্রাহকেরা। এ নিয়ে সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিজেদের অবস্থান জানাবে ট্রাই।”
একই সঙ্গে শর্মার আশ্বাস, মোবাইলের মাসুল বৃদ্ধির বিষয়টিতেও কড়া নজর রাখবে ট্রাই। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশ মনে করছেন, নিলামে চড়া দামে স্পেকট্রাম কেনার পর সংস্থাগুলির কল-চার্জ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। তাঁদের মতে, চার বছর আগে প্রায় ‘জলের দরে’ টু-জি স্পেকট্রামের লাইসেন্স পাওয়ার কারণেই সস্তায় পরিষেবা দিতে সক্ষম হয়েছিল সংস্থাগুলি। আর বাজার ধরতে তারা দাম কমানোর কৌশল নেওয়ায়, বাধ্য হয়েই একই পথে হাঁটতে হয়েছিল বাকি সংস্থাগুলিকেও। কিন্তু নিলামে চড়া দামে স্পেকট্রাম কিনলে দাম বাড়াতে বাধ্য হবে তারা সকলেই। ঠিক যেমনটা হয়েছে থ্রি-জি পরিষেবার ক্ষেত্রে।
শুধু তাই নয়। নিলামের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক পেশি সব সংস্থার রয়েছে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। তাঁদের আশঙ্কা, এই নিলামের জেরে এক লাফে বহু গুণ বাড়বে ব্যবসার খরচ। তাই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে বেশ কিছু ছোট সংস্থা। টিকে থাকবে আর্থিক বলে বলীয়ান ‘বড়’ সংস্থাগুলিই। ফলে কমবে প্রতিযোগিতা। এবং সেই সুযোগে কল-চার্জ বাড়াবে নিলামে জয়ী সংস্থাগুলি।
তবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল রাজন ম্যাথুজ। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের আওতায় পড়ছেন দেশের মাত্র ৫ শতাংশ গ্রাহক। ফলে, শুধু এর জন্য সামগ্রিক ভাবে দেশের টেলিকম ব্যবসায় প্রভাব পড়া শক্ত। তাই এই রায়ের সঙ্গে মাসুল বৃদ্ধির সম্ভাবনার কোনও যোগ নেই বলেই তাঁর অভিমত। তবে অন্যান্য কিছু কারণে এমনিতেই যে মাসুল বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনি। |