সকালে ক্লাস হয় গাছতলায়। দুপুরে আবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।
বছর দু’য়েক ধরে এ ভাবেই চলছে সরকারি অনুমোদন পাওয়া মন্তেশ্বরের পানবড়িয়ার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মন্তেশ্বরের শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের পানবড়েয়া গ্রামে আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় ২০০৯ সালে আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রামে স্কুল গড়তে মোট পাঁচ কাঠা জমি দিতে রাজি হন হাসেম মল্লিক, ফরোজ আলি শেখ ও জাকের আলি শেখ। ঠিক হয়, পঞ্চায়েত ভবন সংলগ্ন জমিতেই স্কুল তৈরি হবে। এর জন্য ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা সরকারি অনুদানও মেলে। প্রাথমিক ভাবে স্কুল তৈরির কাজ শুরু হয়।
কিন্তু বাধা দিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। জায়গাটিকে কবরস্থান দাবি করে সেখানে স্কুল তৈরির কাজ বন্ধ করতে মন্তেশ্বর থানা-সহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানান তাঁরা। এর পরে তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও জায়গাটি পরিদর্শন করে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা গ্রামবাসীদের স্কুলের জন্য অন্যত্র জমি দান করতে অনুরোধ করেন। যদিও তা আজও হয়নি।
ভবন নির্মাণ না হলেও স্কুলের অন্য কাজ থেমে থাকেনি। দু’জন শিক্ষক নিযুক্ত হন। ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৬ জন ছাত্র-ছাত্রী। পরের বছর সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬-তে। এ বছর ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৩। ভবন তৈরি না হওয়ায় প্রথম থেকেই ওই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় মুসলিমপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। বর্তমানে সেখানে একই ঘরে তিনটি শ্রেণির পঠন-পাঠন চলে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন শেষ হলে তবেই ওই ঘরটিতে বসার জায়গা মেলে। সমস্যা হয় গ্রীষ্মে। বাধ্য হয়ে দুই শিক্ষককে সকালে গাছতলাতেই ক্লাস নিতে হয়। নতুন স্কুলে পরিকাঠামো না থাকায় মিড-ডে মিলের খাবার আসে পুরোনো স্কুল থেকেই।
নতুন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজীর দে বলেন, “ভবন তৈরি না হওয়ায় আলমারিও নেই। তাই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। জানি না এই সমস্যা কবে মিটবে।” তাঁর অভিযোগ, “নানা সময় অভিভাবকদের জমি দান করতে অনুরোধ করা হলেও সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, আর্থিক সঙ্কটই এর প্রধান কারণ।
এ দিকে স্কুলের দুর্দশায় ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরাও। হাসিনা খাতুন, বুলবুল শেখদের কথায়, “ছোট ঘরে কষ্ট করে বসতে হয়। মনে হয় কখন ছুটি হবে।” তবে শুশুনিয়া পঞ্চায়েত প্রধান টিঙ্কু মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গ্রামবাসীরা জমি দিলে স্কুল তৈরি হবে। না হলে হবে না।” মন্তেশ্বর চক্রের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভেন্দু রায় পানবড়েয়া গ্রামের স্কুলটির সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য দানের জমি ছাড়াও সরকারি খাস জমিরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি খাস জমি না থাকায় সমস্যা বেড়েছে। এক বার ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কেউ আর জমি দিতে এগিয়ে আসেননি। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |