চেনা চিত্র উত্তরের ছ’জেলায়
বরফ-শীতে বারো-বরণ উৎসবের মেজাজে
প্রায় দিনভর মেঘের চাদরের আড়ালে চলে গিয়েছিল উত্তরের পাহাড় ও সমতল। দিনান্তে তুষারপাতও ছিল দার্জিলিঙের সান্দাকফু-ফালুটে। সন্ধ্যা নামতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি পাহাড় ও লাগোয়া শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে। এমন দুর্যোগ মাথায় নিয়েও নতুন বছরের প্রথম দিনে তিস্তা থেকে সঙ্কোশে ছিল চির চেনা উৎসবের মেজাজ। দুর্যোগ উপেক্ষা করেই বর্ষবরণের উৎসবে মেতেছে উত্তরের পাহাড় ও সমতল। বছরের প্রথম দিনে এহেন আবহাওয়ার কারণ কী? উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, মূলত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হওয়ায় আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার বলেন, “ঘূর্ণিঝড় থানের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ। তামিলনাড়ুর উপকূলে দু’দিন আগে থানে আছড়ে পড়ে। তারই প্রভাবে রবিবার সকাল পর্যন্ত মেঘে ছেয়ে ছিল পাহাড়-সমতলের আকাশ। বেলা গড়াতেই আচমকা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকে পড়ে উত্তরবঙ্গের আকাশে। ফলে তুষারপাত হয় পাহাড়ে। শুরু হয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টি।” অন্তত আটচল্লিশ ঘণ্টা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে দুর্যোগ সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের বর্ষবরণের উৎসবে সামিল হতে উদ্দীপনায় কোনও কমতি ছিল না। পাহাড়-সমতল ছিল কিন্তু উৎসব মুখর। সেই শনিবার রাত থেকেই। মধ্যরাত পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মেতেছেন মানুষ। তার উপরে তুষারপাত হওয়ায় পাহাড়ে চলথে থাকা চা পর্যটন উৎসব আরও জমে উঠেছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। উৎসব কমিটি পক্ষে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন বলেন, “সান্দাকফু ফালুটে তুষারপাত হওয়ায় পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে। আবহাওয়ার যা গতিপ্রকৃতি তা বজায় থাকলে দু’একদিনের মধ্যে দার্জিলং, ঘুম, টাইগার হিলেও তুষারপাতের একটা সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনকেই মনে করছেন। তাহলে আমাদের উৎসব আরও জমজমাট হয়ে উঠবে।”
শিলিগুড়ির শালুগাড়ায় সরিয়া পার্কে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
সমতলের সর্বত্রই ছিল একই দৃশ্য। বালুরঘাট, মালদহ, কোচবিহার, রায়গঞ্জ কিংবা জলপাইগুড়ি শহরও গভীর রাত পর্যন্ত ছিল উৎসব মুখর। শিলিগুড়িতেও ছিল শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উৎসবের আমেজ। রাতভর পুলিশি তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তারই মধ্যে ঘটেছে ছোটখাটো বাইক দুর্ঘটনা। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য আটক করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে। রবিবার, ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে সকাল থেকেই ফের নানা জায়গায় রাস্তায় নামেন মানুষ। ছয় জেলায় সাতসকালে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের দেখা যায় নানা অনুষ্ঠানে। শোভাযাত্রা হয়েছে বহু জায়গায়। শিলিগুড়িতে সাত সকালে ৫০টি ঢাক বাজিয়ে এক বর্ণময় মিছিল নিয়ে পথে নামে সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাব। সুর্বণজয়ন্তী উৎসবের সূচনা হল সেখানে। বেলা যত বেড়েছে তত পিকনিকের গাড়ির ভিড়ও দেখা গিয়েছে রাস্তায়। সেবকের করোনেশন সেতু, মংপং, জলপাইগুড়িতে তিস্তা পাড়েও ভিড়। তবে নতুন বছরে পাহাড় থেকে সমতলের অনেকেরই আক্ষেপ একটাই। তা হল, সূর্যোদয়ের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় থানের সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা মিলিয়ে এই পরিস্থিতি। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ফের জমিয়ে ঠাণ্ডা পড়বে। আবহাওয়া বিভাগের প্রধান সুবীরবাবুর কথায়, “নতুন বছরের প্রথম দিন পাহাড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমতলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সমতলে ২০ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। দু-চারদিনের মধ্যেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমার কথা।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের গ্যাংন্টকের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানান, হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের দুর্যোগ কাটতে অন্তত দু’দিন লাগবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.