বিধানসভা ভোটের মতোই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে মালদহে তরজা বাধল তৃণমূল ও কংগ্রেসের।
আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদহ থেকে কংগ্রেসকে ‘উৎখাত’ করার ডাক দিল তৃণমূল। রবিবার ইংরেজি নববর্ষের দিনে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সভা থেকে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে ওই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তিনি বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। জেলার উন্নয়ন করতে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসকেও পঞ্চায়েত থেকে উৎখাত করতে হবে। সত্যিই যদি মা-মাটি-মানুষের সরকারের হাত শক্ত করতে চান, তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসকে মালদহ থেকে উৎখাত করুন!”
পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী এবং সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও। ডালুবাবু বলেন, “জোট হবে কি না, সেটা সনিয়া গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করবেন। সাবিত্রী মিত্র বলার কে? আর উৎখাত করার হুঙ্কার দিয়ে লাভ নেই! মালদহে যে তৃণমূলের জায়গা কতটা, তা পঞ্চায়েত ভোটে বুঝিয়ে দেওয়া হবে!”
রাজ্যে যে কয়েকটি জেলা এখনও কংগ্রেসের ‘ঘাঁটি’ বলে পরিচিত, মালদহ তার মধ্যে একটি। পঞ্চায়েত ভোটে জোট হবে কি না, তা অনেকাংশেই স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণের উপরে নির্ভরশীল। উপর তলার নিয়ন্ত্রণ সেখানে থাকে না, তবুও রাজ্য রাজনীতিতে শাসক শিবিরের দুই শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে মালদহের মতো জেলায় এমন তরজা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। তবে জোটে যা-ই টানাপোড়েন হোক, এ ব্যাপারে কংগ্রেসের তরফে শেষ সিদ্ধান্ত যে হাইকম্যান্ডই নেবে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সবাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও। হুগলির বৈদ্যবাটিতে জেলা কংগ্রেস আয়োজিত এক ফুটবল প্রতিযোগিতার আসরে গিয়ে প্রদীপবাবু এ দিন বলেছেন, “জোটে থাকা, না-থাকা শুধু রাজ্যের ব্যাপার নয়। কেননা, দলের হাইকম্যান্ডের নির্দেশেই জোট হয়েছে। রাজ্যে এখন যা পরিস্থিতি তাতে, অনেকেরই মনে হচ্ছে, জোট থাকা সমীচীন নয়। তবে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হাইকম্যান্ডই নেবে।”
বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই মালদহে দুই জোট শরিকের সম্পর্ক ক্রমশ ‘তিক্ত’ হচ্ছে। এলাকা দখল থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে বিবৃতির লড়াই চলছে। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী এ দিন যে ভাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন, তাতে দু’দলের সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকবে বলে জোট-শিবিরের আশঙ্কা। শহরের রাজ হোটেল মোড়ে আয়োজিত প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী বলেন, “আমরা জোট চাই। সিপিএমকে হারাতে ফ্রন্টের যে কোন শরিকের সঙ্গে জোট করতে চাই! কংগ্রেস মালদহে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে! সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একজোটে মালদহ জেলা পরিষদের বাজেট পাশ করেছে। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতিতেও। কংগ্রেস যে হাত সিপিএমের সঙ্গে মিলিয়েছে, সেই হাতের সঙ্গে আমরা হাত মেলাব না! পঞ্চায়েতে একাই লড়াই করব। কংগ্রেসের শক্তি নেই আমাদেরকে আটকায়!”
তৃণমূল জেলা সভানেত্রীর এই আক্রমণে ‘ক্ষুব্ধ’ প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা জেলার সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। তিনি বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে কে হাত মিলিয়েছে, তা মালদহের মানুষ জানেন। তৃণমূলের লোকেরা সিপিএমের সমাজ-বিরোধীদের দলে ঢোকাচ্ছেন। নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেসকে ভাঙার চক্রান্ত করছেন। মালদহের মাটি কংগ্রেসের মাটি, গনি খান চৌধুরির মাটি। হাজার বছর চেষ্টা করেও সাবিত্রী মিত্র মালদহের মাটি থেকে কংগ্রেসকে উৎখাত করতে পারবেন না! তৃণমূলের ক্ষমতা থাকলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার একটি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে দেখাক!”
পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে সাবিত্রীদেবী এ দিন জেলার উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রস্তাব ঘোষণা করে বলেন, “টি বোর্ডের মতো মালদহে ম্যাঙ্গো বোর্ড গড়ে তোলার জন্য দাবি করা হয়েছে। ভূতনিতে সেতুর জন্য ১৪ কোটি টাকা, নঘরিয়া ও ফুলবাড়িয়ার মধ্যে সেতুর জন্য ৮ কোটি টাকা, মানিকচকে একটি কলেজ ও মডেল স্কুল, গাজলে একটি মহিলা কলেজ, মালদহে একটি আইন কলেজের দাবি করা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, চাষিদের ধান বিক্রিতে ‘অচলাবস্থা’ না-কাটলে তাঁরা বৃহত্তর কৃষক আন্দোলনে যাবেন বলে এ দিন ফের জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। বৈদ্যবাটিতে এ দিন তিনি বলেন, “বুধবার কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে আমরা সমাবেশ করব। সমস্যা না-মিটলে এটিকে বড় কৃষক আন্দোলনে রূপান্তর করব। এই পরিস্থিতিতে শুধু চাষিই নয়, সাধারণ মানুষও অসুবিধায় পড়ছেন। পাট চাষিরাও দাম পাচ্ছেন না।” |