আইনি কোনও সমস্যা নেই। নেই টাকার অভাবও। তবু কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে গাড়ির বিশেষ নম্বরপ্লেট বিলির কাজ আশানুরূপ ভাবে করে উঠতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
কথা ছিল, নতুন গাড়িগুলোর পাশাপাশি ধাপে ধাপে পুরনো সমস্ত গাড়িতে এই বিশেষ নম্বরপ্লেট বসানো হবে। রাজ্যের সর্বত্র। কিন্তু গত এক বছরে কলকাতা-সহ
সাকুল্যে পাঁচটি জেলায় কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যের সিংহভাগই প্রকল্পের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছে। মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে সম্প্রতি মহাকরণে রাজ্যের পরিবহণ-সচিব বৈঠক করেছেন বিভিন্ন জেলাশাসক ও আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসার (আরটিও)-দের নিয়ে।
মূলত নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বার্থে ২০০৫-এর ১ জুন থেকে রাজ্যের সর্বত্র গাড়িতে এই ‘হাই সিকিউরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট’ (এইচএসআরপি) বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। আইনি বাধায় ২০১০ পর্যন্ত কাজে হাত দেওয়া যায়নি। দফায় দফায় বৈঠকের পরে ২০১১-র ১ জানুয়ারি কলকাতায় তা শুরু হয়। ১ মার্চ শুরু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তার পরে হুগলি, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে। সব মিলিয়ে হাতে গোনা পাঁচটি জেলায়।
নতুন নম্বরপ্লেট তৈরির খরচ দেন গাড়ির মালিক। আইনি জটিলতাও নেই। তা হলে এই অবস্থা কেন?
পরিবহণ-অফিসারদের ব্যাখ্যা, মূলত পরিকাঠামোর অভাবের কারণেই কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছে না। রাজ্যের পরিবহণ-সচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা বলেন, “পরিবহণ-অফিসগুলোর পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই গোটা রাজ্যে নতুন গাড়ির নম্বরপ্লেট বিলি শুরু করা যাবে।”
মহাকরণ-সূত্রের খবর: আরটিও-দের বলা হয়েছে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শুরু করতে। পুরনো গাড়ির প্লেট দেওয়া কবে থেকে হবে, তার জানাতে না-পারলেও সচিবের দাবি, “এই কাজ দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম শুরু হয়েছে।” যদিও তাঁর পূর্বসূরি সুমন্ত্র চৌধুরী ২০১০-এ প্রকাশ্যে জানায়েছিলেন, “সিকিম, গোয়া, মেঘালয়-সহ কিছু রাজ্যে নতুন নম্বরপ্লেট বিলি শুরু হয়ে গিয়েছে।”
পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হচ্ছে কী ভাবে?
পরিবহণ-সূত্রের খবর: পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গাড়ির নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) হয় কলকাতায়। কাজে গতি আনতে বেলতলার পাবলিক ভেহিক্লস বিভাগকে (পিভিডি) বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কসবায় একটা অফিস খোলা হয়েছে। কলকাতা তো বটেই, লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শিগগিরই এমন একাধিক কার্যালয় খোলার চেষ্টা হচ্ছে। গোপালিকার কথায়, “এতে এইচএসআরপি বিলি থেকে শুরু করে নানা কাজে সুবিধা হবে।”
প্লেট পাঁচালি
এইচএসআরপি কী?
ক্রোমিয়ামের চাদরে বিশেষ হলোগ্রাম লাগানো নম্বরপ্লেট। দেশে সব গাড়ির নম্বরপ্লেটে সামঞ্জস্য আনতে ’৮৯-এর কেন্দ্রীয় মোটরযান বিধির ৫০ নম্বর ধারা সংশোধন করে সরকার তা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল।
এর বিশেষত্ব কী?
অ্যালুমিনিয়ামের প্লেটে দেশের পরিচয়জ্ঞাপক ‘IND’ শব্দটি নীলে লেখা থাকে। থাকে গাড়ির ঠিকুজি সংবলিত একটি ‘চিপ।’
এতে লাভ কী?
নম্বরপ্লেটে কারচুপি সংক্রান্ত অপরাধ রোখা যাবে। কারণ, এটি সহজে খোলা যায় না। উপরন্তু গাড়িটি কোথায় নথিভুক্ত, ইঞ্জিন নম্বর ইত্যাদি তথ্য চিপের সাহায্যে দ্রুত জানা সম্ভব। |