‘উষ্ণতম’ পৌষের চোখ এখন পাহাড়ের বৃষ্টি-বরফে
ত্তর যদি জব্বর শীত পায়, দক্ষিণ কি ছিটেফোঁটা পাবে না! ঠিক প্রশ্ন নয়। একটা আশা।
আর এই আশাবাদী প্রশ্ন জেগেছে নববর্ষের প্রথম দিনে।
কারণ সান্দাকফু-ফালুটে তুষারপাত শুরু হয়েছে আর টাইগার হিল-ঘুম-দার্জিলিঙে বৃষ্টি। মরসুমের প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গ তেমন শীত না-পেলেও এই বৃষ্টি আর বরফ সেখানে শীতের আশা ফিরিয়ে আনছে।
অথচ কলকাতায় ২০১২-র সূচনা হল গত ১২ বছরের ‘উষ্ণতম’ শীত দিয়ে। উত্তর আর দক্ষিণের এই বৈপরীত্যের মধ্যেই উত্তরবঙ্গের বৃষ্টি-বরফে আশায় আশায় বুক বাঁধছে দক্ষিণও। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছে বছরের প্রথম দিন। আগামী তিন-চার দিন পাহাড়ের নতুন নতুন জায়গায় বরফ পড়তে পারে। আর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নামবে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। উত্তরবঙ্গে দু’তিন দিনের মধ্যে শীত ফেরার ইঙ্গিত স্পষ্ট। দক্ষিণে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি এখনও তেমন স্পষ্ট নয়। তবে উত্তরের শীত-ভাগ্যের দিকেই তাকিয়ে আছে দক্ষিণবঙ্গ।
দার্জিলিং পাহাড়ে এখন চলছে চা পর্যটন উৎসব। রবিবার পড়ন্ত বেলায় সান্দাকফু-ফালুটে তুষারপাত এবং দার্জিলিঙে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জেলা প্রশাসন পর্যটন উৎসব নিয়ে আশাবাদী। কারণ আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আরও কয়েক দিন যদি মেঘের চাদর পাহাড়ের উপরে চেপে বসে থাকে, তা হলে তুষারপাত হতে পারে দার্জিলিং, ঘুম আর টাইগার হিলেও। দার্জিলিঙে এ দিনের ঝিরঝিরে বৃষ্টিই সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। রবিবার বৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশেও।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িও ঝিরঝিরে বৃষ্টি পেয়েছে। তাতে ফিরে আসছে শীতের আমেজ।
এক যুগের উষ্ণতম
১ জানুয়ারি (কলকাতায়)
২০১২ ১৭.২
২০১১ ১৪.৯
২০১০ ১৩.৪
২০০৯ ১৫.১
২০০৮ ১১.৭
২০০৭ ১৩.২
২০০৬ ১২.২
২০০৫ ১৪.৪
২০০৪ ১২.৬
২০০৩ ১৪.৪
২০০২ ১৪.১
২০০১ ১৪.৩

* ডিগ্রি সেলসিয়াসে
কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গ এখন অপেক্ষা করছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির বৃষ্টির জন্য। যা ‘গরম’ শীত থেকে বাঁচাতে পারে। রবিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি সময়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থেকে চার ডিগ্রি বেশি। গত ১০ বছরে এত গরম ‘পৌষ’ কখনও পায়নি কলকাতা। পাঁচ দিন ধরে শীত কার্যত বিদায় নিয়েছে এ তল্লাট থেকে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১৭ থেকে ১৯ ডিগ্রির মধ্যে। মরসুমটা শীত না বসন্ত, বোঝা যাচ্ছে না। আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগজীবাণুরা ফিরে এসেছে। ঘরে ঘরে ‘ভাইরাল ফিভার’ বা জীবাণু-জ্বর।
দার্জিলিং পাহাড়ের তুষারপাত এবং দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি এই দুইয়ের কারণ কিন্তু একটিই। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তর ভারত থেকে আসা একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এই মুহূর্তে ঝাড়খণ্ড-বিহার হয়ে বইছে উত্তরবঙ্গে। তার প্রভাবেই এই অবস্থা। ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং ঝাড়খণ্ডে এ দিন বৃষ্টি হয়েছে। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ আর সকাল থেকে শুরু হওয়া লাগাতার ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে নববর্ষের আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি-ডালটনগঞ্জে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব, বিকেল ৪টে পর্যন্ত রাঁচি শহরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ছয় মিলিমিটার। বেলা আড়াইটে পর্যন্ত ডালটনগঞ্জে ১৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের আবহাওয়ার জের রবিবার সন্ধ্যা থেকেই পড়তে শুরু করেছে সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে। কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, এমনকী কলকাতাতেও। দক্ষিণ দিক থেকে বইছে বাতাস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সোমবার কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামতে পারে। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় কিছুটা নেমে যেতে পারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তাই দিনের বেলা শীত-শীত ভাবটা থাকবে।” বৃষ্টিটা হয়ে গেলে ভাল। নইলে রাতে অস্বস্তি বাড়বে বলে জানান আবহবিদেরা।
১৮-২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় ভালই ঠান্ডা ছিল। লেপ-কম্বল তো বটেই, গ্লাভস, বাঁদর-টুপি বেরিয়ে পড়েছিল আলমারি থেকে। মহানগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ১১ ডিগ্রির নীচে। কয়েক দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। প্রথমে ঘূর্ণিঝড় ‘থানে’ এবং পরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ফলে তৈরি উচ্চচাপ বলয়ে ধাক্কা খেয়ে শীত প্রায় পুরোপুরিই গা-ঢাকা দিয়েছে। বৃষ্টি হয়ে আকাশ পরিষ্কার হলে শীত ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা থাকছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। যদি না এই মুহূর্তে উত্তর-পশ্চিম ভারতে থাকা অন্য একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা চলে আসে পূর্ব ভারতের দিকে। ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে রাজস্থান এবং উত্তর ভারতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ৩-৪ ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। সে-ও যদি পূর্ব ভারতে হানা দেয়, তা হলে আরও দুর্দশায় পড়তে পারে শীত। তবু পাহাড়ের বৃষ্টি আর বরফে আশা রাখছে দক্ষিণবঙ্গ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.