বধূকে খুনের অভিযোগে স্বামী ও সতীনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে স্বরূপনগরের বালকি গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আটেক আগে স্বরূপদহ গ্রামের মোক্তার মল্লিকের মেয়ে তাহামিনার (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বালকি গ্রামের খাইরুল সর্দার ওরফে ছাবিরের। রেনু বিবি নামে এক মহিলার সঙ্গে আগেই বিয়ে হয়েছিল ওই ব্যক্তির। প্রথম পক্ষের দুই সন্তান। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছাবির দ্বিতীয় বার বিয়ের পরে তাহামিনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বই। স্বামীর কথা মতো সেখানে হোটেলে কাজ নেন ওই তরুণী। তাতে সংসারের আর্থিক হাল ফেরে।
স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, ইদানীং কাজ ছাড়তে চেয়েছিলেন তাহামিনা। সম্প্রতি তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরেও আসেন। কিন্তু তাহামিনার এই পদক্ষেপ না-পসন্দ ছিল রেনুর। তাহামিনাকে যাতে দ্রুত আবার মুম্বইয়ে পাঠিয়ে দেওয়া যায়, সে জন্য স্বামীর উপরে তিনি চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। তাহামিনা কিছুতেই যেতে চাননি। চেয়েছিলেন, তাঁরও সন্তান হোক। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিরুপদ্রব জীবন কাটানোর ইচ্ছে জেগেছিল তাঁর মনে।
কিন্তু বিধি বাম। শনিবার রাতে সর্দার পরিবারে অশান্তি চরমে ওঠে। অভিযোগ, তাহামিনাকে মারধর করে, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে তাঁকে খুন করেন ছাবির ও রেনু। মৃতার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ‘দোষ ঢাকতে’ ‘অসুস্থ’ তাহামিনাকে দেখাতে ওঝা-গুণিন ডাকা হয়। রাত ৩টে নাগাদ ওই ঘটনায় আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছিল। কী ভাবে ওই তরুণীর মৃত্যু হল, তা জানতে চাওয়ায় ছাবির ও রেনু গ্রাম ছাড়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মারধর করা হয়। পরে মৃতার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় মানুষ ছাবির ও তাঁর বড় বউকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেন। গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে। ধৃতদের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও মোক্তারের দাবি, কাজের লোভ দেখিয়ে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মেয়েকে। সে ওই কাজে রাজি ছিল না। তবু স্বামীর কথা কাজ শুরু করে। টাকা-পয়সাও আসছিল। কিন্তু সে সব ছেড়ে এ বার মেয়ে মুম্বই থেকে ফিরে ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারে মন দিতে চেয়েছিল। মোক্তারের কথায়, “এতে রেনু চিন্তায় পড়ে যায়। তার ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে বলে ভয় ঢুকেছিল ওপ মনে। স্বামী-স্ত্রী পরিকল্পনা করে আমার মেয়েটাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে।”
বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে।” |