হঠাৎ করে হুজুগে পিকনিক, পাড়ার কয়েকজনে মিলে বা ক্লাব কিংবা অফিসের বন্ধুরা মিলে আচমকা বেরিয়ে পড়া। সংখ্যায় বড়জোর দশ। মেনু বলতে খিচুড়ি-ডিমভাজা অথবা কোনও চটজলদি পদের সঙ্গে মাংস-ভাত। পিকনিকের সেই সুবর্ণদিনে এ সব ছিল জলভাত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক একজন একটি শীতের মরসুমেই এমন পাঁচ-ছ’টি পিকনিক করে আসতেন। সেই দিন এখন গত। মূল্যবৃদ্ধির কোপে পড়েছে শীতকালীন সেই হঠাৎ খুশির আমোদ।
মূল্যবৃদ্ধির কোপে পড়ে পিকনিক এখন মরসুমে একটি বা বড়জোর দু’টি। একটি কর্মস্থলে। অন্যটি পড়শি বা বন্ধুদের সঙ্গে। দু’টিই আগে থেকে ঠিক করা হয়। কোথায় যাওয়া হবে, তা নিয়ে চলে বিস্তর তর্কবিতর্ক, তারপরে মেনু নিয়ে আরও কয়েকদফা চাপানউতোর এবং শেষ পর্যন্ত মাথাপিছু চাঁদা ঠিক করা নিয়ে মন কষাকষির পরে অবশেষ সেই দিনটিতে এক সঙ্গে মিলে খাওয়া দাওয়া। সে সব এ বারও হচ্ছে। কিন্তু যেটা হচ্ছে না, তা হল ওই হঠাৎ করে পিকনিকের আয়োজন।
কিন্তু এ বার তো শীত কম। কুয়াশাও প্রায় নেই। তা হলে? নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহার কথায়, “সব ধরনের জিনিসেরই দাম বেড়েছে। পিকনিকও তাই দামি হয়ে গিয়েছে। নিয়ম রক্ষার মতো করে বড় পিকনিক তবু হচ্ছে, কারণ সেখানে লোকসংখ্যা অনেক বেশি। তা ছাড়া, সেটা অনেক জায়গায় প্রথা হয়ে যায়। কিন্তু আচমকা পিকনিকে চলে যাওয়ার যে রেওয়াজটা ছিল, সেটা এ বারে খুব কমে গিয়েছে।”
অবস্থা ঠিক কী রকম, তার একটা নমুনা পাওয়া যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রদীপ সাহার কথায়। তিনি মাইক ভাড়া দেন। তাঁর কথায়, “সাধারণ ভাবে দু’টো বক্সের সেট নিলে ২০০ টাকা লাগে। তবে তিন-চারটে বক্স সহ নানা উপকরণ নিলে ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু এ বার ২৫ ডিসেম্বরই হোক বা ১ জানুয়ারি, তেমন মাইকের চাহিদা ছিল না।”
খরচ আরও রয়েছে। রান্না না হয় নিজেরাই করলেন, মাটিতে বসেই খেয়ে নিলেন, কিন্তু পিকনিক করতে তো আর বাসে বা ট্রেনে করে যাওয়া যায় না। তা হলে যে মজাটাই অর্ধেক মাটি। উত্তমবাবু বলেন, “আসলে এখন একটা পিকনিক করতে গেলে কম করে ৩০০ টাকা করে লাগছে। তা-ও অনেকে হলে। ছোট পিকনিক তাই ব্যয়সাধ্য। গাড়ি ভাড়া থেকে রান্নার গ্যাসসবেরই তো দাম ঊর্ধ্বমুখী।”
তাই মায়াপুর বা নবদ্বীপের গঙ্গার পাড়ে পিকনিকের ভিড় এ বার বড়দিন, বর্ষারম্ভ ছাড়া তেমন জমছে না। এমনকী, বছরের প্রথম দিনে নদীতে নৌকা ভাসিয়ে বক্সে গান বাজিয়ে উদ্দাম পিকনিকও এ বার অনেক কম। |