|
|
|
|
গোষ্ঠীকোন্দল চন্দ্রকোনা, ভগবানপুরে |
দুই জেলায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ধূমধাম সহকারে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করল তৃণমূল। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা, রক্তদান শিবির, বস্ত্র বিলির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তবে, প্রতিষ্ঠা দিবসেও গোষ্ঠী কোন্দল এড়াতে পারেনি তৃণমূল।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে পতাকা তোলা-সহ নানা অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়াকে কেন্দ্র করে চন্দ্রকোনা থানা (চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লকে) এলাকার একাধিক জায়গায় গণ্ডগোল বাধে রবিবার। অভিযোগ, বচসা থেকে মারধর এমনকী কল্লা এলাকায় বোমাবাজিও চলেছে। সব মিলিয়ে দলের দু’পক্ষের ১০-১২ জন অল্প-বিস্তর জখম হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জন চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ জানিয়েছে,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই। এলাকায় পুলিশি টহল চলছে।
এ দিন সকালে চন্দ্রকোনার মাধবপুরে দলের যুব নেতা সঞ্জয় রায় পতাকা তুলতে গেলে দলেরই অন্য গোষ্ঠী বাধা দেয় বলে অভিযোগ। দলনেত্রীর ফেস্টুন ছিড়ে দলীয় অফিসে তারা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতে মাধবপুরে দলীয় পতাকা তোলা হয়। একই ভাবে জাড়াতেও দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক গণ্ডগোলের জেরে পতাকা তোলা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। পরে দু’পক্ষেরই লোকজন পতাকা তোলে। অন্য দিকে, কল্লাতে সকাল থেকেই ব্যাপক সংঘর্ষ হয় স্থানীয় দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। বোমাবাজিও হয়। একই কারণে উত্তেজনা ছড়ায় আকতকলা, ঝাঁকরার বিভিন্ন বুথে। পরে ব্লক নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। চন্দ্রকোনা থানা এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল লেগেই রয়েছে। বছরের প্রথম দিনে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও তাতে ছেদ না পড়ায় ক্ষুব্ধ দলেরই কর্মী-সমর্থকরা। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “চন্দ্রকোনায় গণ্ডগোলের কথা শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে ভগবানপুর কমিউনিটি হলে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেন ভগবানপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হারুন রশিদ ও তাঁর অনুগামীরা। অন্য দিকে, থানার সামনে দলীয় কার্যালয়ে অনুগামীদের নিয়ে পৃথক ভাবে অনুষ্ঠান করেন জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ স্বপন রায়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হারুন রশিদের জায়গায় আসা নবনিযুক্ত ব্লক যুব সভাপতি গৌতম সিংহও। বিকেলে পদযাত্রায় যোগ দেন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি।
এ দিন সকালে তমলুক শহরের রামসীতা বারোয়ারি প্রাঙ্গণে তৃণমূলের পতাকা উত্তেলন করেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া, মেচেদা বাজার, তমলুক ব্লকের হরিদাসপুর, নিমতৌড়ি বাজার, পাঁশকুড়া ব্লক কার্যালয়, কোলাঘাটের পাঁকুড়িয়া, দেউলিয়া এলাকায় পতাকা উত্তোলন ও শহিদবেদিতে মাল্যদান করা হয়। হরিদাসপুর বাজারের অনুষ্ঠানে ছিলেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম বাজার, ভূতামোড়, খেজুরির লাখি, চণ্ডীপুর বাজারে নানা অনুষ্ঠান হয়। নন্দীগ্রাম বাজারে তৃণমূল কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন ও ক্ষুদিরামের মূর্তিতে মাল্যদান করেন দলীয় নেতৃত্ব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের, জেলা পরিষদ সদস্য পীযূষ ভুঁইয়া, দলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল প্রমুখ। মহিষাদলের কালিকাকুণ্ডু গ্রামে লখ্যা-২ পঞ্চায়েতের তরফে একটি স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার, চিকিৎসক আশিস ভক্তা, পঞ্চায়েত প্রধান সুদর্শন মাইতি প্রমুখ। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “খুব শীঘ্রই রাজ্যে বেশ কিছু পরিবেশকর্মী নিয়োগ করব আমরা। এ ছাড়াও বিপ্লবী সতীশ সামন্তের নামাঙ্কিত মহিষাদলের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে আদর্শ গ্রাম পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তোলা হবে।” এ দিনই হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের ফল বিতরণ করে তৃণমূল শিক্ষা সেল। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল শিক্ষক নেতা রণজিৎ দাস, মিলন পাত্র প্রমুখ। কাঁথিতে তৃণমূল কংগ্রেস কাযার্লয়ের উদ্বোধন করেন সাংসদ তথা দলের রাজ্য যুব সভাপতি শুভেন্দু আধিকারী। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী, কাউন্সিলর তাপস বেরা প্রমুখ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সর্বত্রই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। কোথাও পতাকা উত্তোলন, কোথাও বাইক মিছিল, কোথাও আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ব্লকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়কেরা উপস্থিত ছিলেন। শহরের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দলের জেলা নেতা থেকে পুরপ্রধানেরা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে, দলকে আরও শক্তিশালী করার কথা জানান দলীয় নেতৃত্ব। তারই সঙ্গে উন্নয়নের কাজে প্রশাসনকে সাহায্য করার উপরেও জোর দেওয়া হয়। কারণ, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। উন্নয়ন ব্যহত হলে মানুষের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে দলের নেতাদেরই।
এ দিন এই উপলক্ষে পদযাত্রার আয়োজন করেছিল মোহনপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। ব্লকের মোট ৮৬টি বুথে ছোট ছোট সভা করার পরে বোড়াই থেকে মোহনপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। মোহনপুর একটি সভাও হয়। ছিলেন তৃণমূল নেতা বিক্রম প্রধান, প্রদীপ পাত্র, লোকেশ কর প্রমুখ। |
|
|
|
|
|