|
|
|
|
জেলা ভাগের দশ বছর পার |
পূর্বে গড়েই ওঠেনি প্রশাসনিক ভবন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
নতুন জেলা তৈরি হওয়ার পর কেটে গিয়েছে দশ-দশটি বছর। কিন্তু নবগঠিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক পরিকাঠামো সেই অর্থে গড়েই ওঠেনি এখনও।
গত ২০০২-এর ১ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৈরি হয়। তমলুকের রাখাল মেমোরিয়াল ময়দানে এক সমাবেশে জেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জেলা সদর হয় তমলুক শহর। নতুন জেলার উদ্বোধন ঘিরে আবেগের পাশাপাশি ছিল উন্নয়নের স্বপ্ন। জেলা সদর তমলুকের উন্নয়নের আশায় ছিলেন শহরবাসী। কিন্তু আজ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। এতগুলো বছরে জেলার প্রশাসনিক পরিকাঠামো উন্নয়ন বলতে শুধু তমলুক শহর লাগোয়া নিমতৌড়িতে প্রশাসনিক সদর এলাকার জমি অধিগ্রহণ এবং জমি ভরাট।
প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। জেলা পরিষদ-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর এখনও চলছে ভাড়া বাড়িতে। জেলা সদরের উন্নয়ন তো এখনও স্বপ্ন। ফলে জেলার উন্নয়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জেলা পরিষদের বিরেধী দলনেতা তথা সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, “প্রশাসনিক সদর তৈরির জন্য যে ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদ গত সাড়ে তিন বছরে তার কিছুই করেনি।” |
|
গণপতিনগরে এই জমিতেই গড়ে ওঠার কথা প্রশাসনিক ভবনের। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
গড়িমসির কথা মেনে নিয়ে জেলা প্রশাসনিক সদর গড়ে তোলার জন্য সাইট সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান তথা জেলা পরিষদ সভাধিপতি গান্ধী হাজরা বলেন, “প্রশাসনিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ আশানুরূপ ভাবে এগোয়নি। প্রশাসনিক দফতরের ভবন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং টাকার ঘাটতি আছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।” জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনিক সদর গড়ে তোলার জন্য ২০০৪-এ সরকারি ভাবে গঠিত হয়েছিল এই সাইট সিলেকশন কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি। কমিটিতে জেলাশাসক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকেরা ছিলেন। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নিমতৌড়িতে জেলা প্রশাসনিক সদর চত্বর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। জেলা প্রশাসনিক ভবন, জেলা পরিষদ-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের অফিস তৈরির জন্য হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গণপতিনগর, উত্তর নারিকেলদা, কুলবেড়িয়া, শ্রীকৃষ্ণপুরে ১১২ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। ২০০৭-এ স্থানীয় কৃষক-সহ জমি মালিকদের সম্মতি নিয়ে ওই জমি অধিগ্রহণ হয়। ২০০৯-এ ভরাট হয় জমি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি অধিগ্রহণ, জমি ভরাট-সহ প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরির জন্য আগের সরকার প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। প্রথম পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা খরচ হয়। জমি ভরাট, রাস্তা তৈরি ও নিকাশির উন্নতির জন্য প্রায় ২১ কোটি টাকার কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ টাকায় জমি অধিগ্রহণের পর ভরাটের কাজ হয়েছে। তারপরে টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় রাস্তা ও নিকাশির উন্নয়নের কাজ ব্যহত হচ্ছে। ফলে গত দু’বছরেও কোনও কাজ শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে পূর্ত দফতর জেলার প্রশাসনিক ভবনগুলি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় সমস্ত কাজ থমকে রয়েছে। সভাধিপতি গাঁধী হাজরা বলেন, “প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজে পূর্বতন সরকার আমাদের সাহায্য করেনি। তাই নতুন রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে সব রকম সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|