ফুটবলে যা এখনও হয়নি, ক্রিকেটে তা হয়ে গেল। ব্যারেটো-ওডাফারা চলতি মরসুমে যা এখনও পারেননি, অনুষ্টুপ মজুমদার-লক্ষ্মীরতন শুক্লরা সেটাই করে দেখালেন। নববর্ষের সূচনাতেই ট্রফি ঘরে তুলে ফেলল মোহনবাগান। আর সেটাও এল চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারিয়ে।
দুপুর বারোটা থেকে ইডেনের ক্লাবহাউসে মোহন-সমর্থকদের হর্ষধ্বনি। অনর্গল ভেঁপু বাজানো। একে ছুটির দিন, তার উপর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ফাইনালের জমজমাট যুদ্ধ। উত্তেজনাটা স্বাভাবিক। আর ম্যাচও যে এমন ঘাত-প্রতিঘাতে ডুবে যাবে কে জানত? স্কোরবোর্ড যতই বলুক, জে সি মুখোপাধ্যায় ট্রফি ৫ উইকেটে জিতেছে মোহনবাগান, ম্যাচ কিন্তু কখনও তত সহজ লাগেনি।
একে তো কমজোরি দল নিয়েও ইস্টবেঙ্গলের ২০ ওভারে ১৬০-৯ তুলে ফেলা। তার উপর ব্যাট করতে নেমে আচমকাই মোহন-শিবির আবিষ্কার করে স্কোরটা ৩৬-৩ হয়ে গিয়েছে! বাগানে ততক্ষণে আফসোস, সৌরাশিস লাহিড়ীর দুর্ধর্ষ বোলিংও (৬-১৬) বোধহয় জলে গেল! ওই অবস্থা থেকে হাল ধরলেন দু’জন। অনুষ্টুপ মজুমদার ও লক্ষ্মীরতন শুক্ল। |
প্রথম জন রঞ্জিতে বাংলার শেষ ম্যাচ থেকেই বুঝিয়ে চলেছেন, তাঁকে টিমে গোটা মরসুমে না রাখাটা কত বড় ভুল ছিল। জে সি-তেও নিয়মিত রান করেছেন অনুষ্টুপ। সেমিফাইনালে ৮৪, আর রবিবারের ফাইনালে ৪৩ বলে ৬৮। উল্টো দিকে আবার ততক্ষণে লক্ষ্মীর ঝাঁপি খুলে গেছে। পায়ে চোট পেলেন, কিন্তু চার-ছয়গুলো আসা বন্ধ হল না। ৪৬ এল মাত্র ২৮ বলে। পাঁচটা চারের সঙ্গে একটা ছক্কা। এক সময় দশ ওভারে একশোর উপর দরকার ছিল মোহনবাগানের। লক্ষ্মী-অনুষ্টুপের দাপটে সেটা নেমে এসে দাঁড়াল শেষ ওভারে পাঁচ। হবে না? ইস্টবেঙ্গলের দুই স্পিনার অর্ণব নন্দী-সৌম্য পাকড়ে মিলে দিলেন ৮ ওভারে ৯১!
“অনুষ্টুপকে শুধু বলছিলাম, কোনও দিকে না তাকিয়ে শুধু চালা,” ম্যাচ শেষে বলছিলেন লক্ষ্মী। আর অনুষ্টুপ? মাসখানেক পরই আবার রঞ্জি ট্রফির একদিনের টুর্নামেন্ট খেলতে নামবে বাংলা। “আশা করছি বাংলার হয়ে ডাক পাব। পেলে পারফর্মও করে দেখাব,” বলে দিলেন অনুষ্টুপ। তাঁকে তো বটেই স্থানীয় ক্রিকেটে চলতি পারফরম্যান্সের পর সৌরাশিসকেও দূরে রাখা বোধহয় কঠিন হবে। রঞ্জিতে যাঁকে খেলানো হয়েছিল মাত্র একটি ম্যাচ। কথা দিয়েছিলেন ক্লাব ক্রিকেট খেলে ফিরবেন। সৌরাশিস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলছিলেন, “আমার আর উপায় কী? বুঝতে পারছিলাম ভাল বল করছি। যে কোনও দিন উইকেট আসবে।” আসছেও। কখনও পাঁচ। কখনও ছয়। সেটাও আসছে ৪ ওভার বল করে!
কী দাঁড়াল? মোহনবাগানের মুকুট জয়, দুই ক্রিকেটারের ফেরার যুদ্ধসবই লেখা রইল নতুন বছরের প্রথম দিন ক্রিকেটের বড় ম্যাচে। |