টোলগে ওজেবে এলেন অনুশীলন শেষ হওয়ার পর। অস্ট্রেলীয় বান্ধবীর সঙ্গে বর্ষশেষের আনন্দ উৎসব পালনের ক্লান্তির জন্য নয়। কোমরের ব্যথা কমাতে ইঞ্জেকশন নেওয়ার জেরে আছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙতেই চলে এসেছেন মাঠে। এবং এসে কী করলেন? সোজা চলে গেলেন ট্রেভর মর্গ্যানের কাছে। বললেন, “আমি কিছুক্ষণ অনুশীলন করতে চাই।” গোলের জন্য তাঁর সেরা টেক্কার অনুরোধ ফেরাননি ব্রিটিশ কোচ। প্র্যাক্টিস শেষ হয়ে গিয়েও হল না। ওপারা-পেনরা বাড়ি চলে যাওয়ার পর গোলকিপারদের দাঁড় করিয়ে টোলগে বল মেরে গেলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা।
গোয়ায় চার গোলে হারের ধাক্কা আজ সোমবার যুবভারতীতে মুছে ফেলতে ইস্টবেঙ্গল যে কতটা মরিয়া সেটা বোঝানোর জন্য টোলগের এই মরিয়া মনোভাবই যথেষ্ট।
অনুশীলনে শেষ পর্যন্ত মধুরেণ সমাপয়েৎ হলেও রবিবাসরীয় নববর্ষের সকালের শুরুতে কিন্তু হোঁচট খেতে হল মর্গ্যান-ব্রিগেডকে। স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেই একপ্রস্থ সমস্যায় পড়ল পুরো ইস্টবেঙ্গল টিম। মূল ড্রেসিংরুম বন্ধ থাকায় প্রথমে সঞ্জু-সৌমিক-খাবরারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন রাস্তায়। কোনও কর্তা হাজির ছিলেন না। অনেক কষ্টে সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী একটি ধুলোভর্তি ছয় ফুট বাই আট ফুটের অফিস ঘরে পোশাক বদল করার জন্য জোগাড় করলেন বটে, কিন্তু গেটের সামনে এসে মর্গ্যান এবং তাঁর সঙ্গীরা দেখলেন গেটে তালা। প্রায় কুড়ি মিনিট এ রকম চলার পর লাল-হলুদ কোচ রেগে গিয়ে সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন, ময়দানে ক্লাবের মাঠে ফিরে যাওয়ার। শেষপর্যন্ত তা অবশ্য হয়নি। |
ইস্টবেঙ্গলের জয়ে ফেরা না, নতুন বছরেও হোঁচট কোনটা আজ ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গী? মর্গ্যানও মনে হয় সেটা নিয়ে সংশয়ে আছেন। নতুন বছরে আপনার লক্ষ্য কী? এই প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। হাসতে হাসতে ব্রিটিশ কোচ বলে দিয়েছেন, “লক্ষ্য স্থির করলেই সেটা ভেঙে যাচ্ছে। তাই সে সব কিছু করছি না। যা পাব দু’হাত ভরে সেটাই নেব,” কথা বলার সময় তাঁর মুখে কেমন যেন আত্মবিশ্বাসহীনতার ছায়া। যা সতেরো মাস ধরে দেখা ‘মর্গ্যান-ব্র্যান্ডের’ সঙ্গে খাপ খায় না। লাল-হলুদ কোচ কি জেনে গিয়েছেন, প্রতিপক্ষ এয়ার ইন্ডিয়া বরাবরই গাঁট ইস্টবেঙ্গলের?
বিমল ঘোষের সময় বলে বলে ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দিতেন বিমানকর্মীরা। সন্তোষ কাশ্যপের এ বারের টিমটা আবার আনপ্রেডিক্টেবল। ডেম্পো, সালগাওকরের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে আই লিগে আলোড়ন ফেলার পর তাঁরা হেরে গিয়েছেন মুম্বই এফ সি, প্রয়াগের কাছে। টিমের তিনটি পজিশনে তিনটি বিদেশি। তবে ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের আলোচনায় রয়েছেন মিডিও জাপানের টাকাউকি ওমিই। টুর্নামেন্টের প্রথম সাত সেরা গোলদাতার সবাই বিদেশি। আট নম্বর জায়গায় রয়েছেন যে ভারতীয় সেই মনদীপ সিংহই আজ হেনরি এডের সঙ্গে নামছেন ওপারা-নির্মলদের সঙ্গে টক্কর দিতে। মুম্বইয়ের এই টিমটার আরও একটা গুণ, শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ার ক্ষমতা। কোচ সন্তোষ কাশ্যপ বলছিলেন, “আমরা কোনও ম্যাচই এক পয়েন্টের জন্য খেলি না। কালও খেলব না। ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট শক্তিশালী টিম জানি। কিন্তু আমরাও অনেক ভাল ম্যাচ জিতেছি।”
মহম্মদ সফিক, সন্দেশ গড়গড়ির মতো ফুটবলার অবশ্য খেলতে পারছেন না বিমানকর্মীদের দলে। ইস্টবেঙ্গলেও কার্ড, চোট বা অসুস্থতার জন্য নেই মেহতাব হোসেন, গুরজিন্দার সিংহ, নওবা, ভাসুম। গোল থেকে স্ট্রাইকার-- দলে তাই প্রচুর পরিবর্তন। গোলে গুরপ্রীত যেমন ফিরছেন, তেমনই টোলগের সঙ্গে বহুদিন পর গোলের মধ্যে না থাকা রবিন সিংহকে দেখা যাবে। মাঝমাঠে পেন-সঞ্জু-খাবরা-সুশান্ত ম্যাথু। মেহতাব না থাকায় আপনার মাঝমাঠে তো সমস্যা। প্রশ্ন শুনেই চটে যান মর্গ্যান। “ও কি ফেডারেশন কাপে ছিল? কার্ড-চোট-আঘাত তো থাকবেই।” কিন্তু চার গোলে হারার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে এত পরিবর্তন? “চার গোল, পাঁচ গোল এখন আকছারই হচ্ছে ফুটবলে। ওসব মনে রাখতে নেই। কাল নতুন ম্যাচ। জিততে হবে।”
এয়ার ইন্ডিয়াকে ফেড কাপে দেখেছিলেন। তারপর আর সে ভাবে দেখেননি। মর্গ্যান নিজেই জানাচ্ছেন। সে জন্য বেশ সতর্ক তিনি। মুখে যতই বলুন, ‘লিগে আরও ওঠাপড়া হবে।’ তাঁর পেশাদার মুখোশের আড়ালে যে মুখটা বেরিয়ে আসছে সেটা কিন্তু যথেষ্ট চিন্তাক্লিষ্ট। কারণ মর্গ্যান জানেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট না পেলে প্রথম পর্বের শেষে দূরবিন দিয়েই আপাতত আই লিগের ট্রফি দেখতে হবে তাঁকে।
|
ইস্টবেঙ্গল : এয়ার ইন্ডিয়া (যুবভারতী ২-০০)। |